ইজতিহাদ বলতে কী বুঝ?
ইজতিহাদ বলতে কী বুঝ? ইসলামী শরীআতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা হলো…
ইজতিহাদ বলতে কী বুঝ?
ইসলামী শরীআতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা হলো “ইজতিহাদ”। এটি ফিকহ শাস্ত্রের এমন একটি কৌশল বা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে সরাসরি সুস্পষ্ট দলীল না থাকলে, আলেম বা মুজতাহিদ ব্যক্তি নিজের জ্ঞান, গবেষণা ও যুক্তি প্রয়োগ করে শরীয়তের মূলনীতির আলোকে একটি সিদ্ধান্ত বা বিধান নির্ণয় করেন। সহজ ভাষায়, ইজতিহাদ বলতে বোঝায়—শরিয়তের সূত্রসমূহের আলোকে এমন কোনো মাসআলা বা প্রশ্নের সমাধান করা, যা কুরআন ও হাদীসে সরাসরি উল্লেখ নেই।
ইজতিহাদের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
“ইজতিহাদ” শব্দটি আরবি “جهد” (জাহদ) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো—পরিশ্রম করা বা চেষ্টা করা। শাব্দিকভাবে, ইজতিহাদ মানে হলো নিজের সম্পূর্ণ চেষ্টা-সাধনা ব্যয় করা। পারিভাষিকভাবে, ইজতিহাদ হলো—এমন এক মানসিক, বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় পরিশ্রম, যার মাধ্যমে একজন যোগ্য আলেম কুরআন, হাদীস, কিয়াস ও ইজমার আলোকে নতুন বা আধুনিক কোনো সমস্যার ইসলামী সমাধান বের করেন।
ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা:
ইসলামী সমাজে যুগে যুগে নতুন নতুন সমস্যা ও প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। যেমন—অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন, ব্লাড ব্যাংক, বায়োটেকনোলজি, ইন্টারনেট ভিত্তিক বাণিজ্য, ডিজিটাল ব্যাংকিং ইত্যাদি। এসব আধুনিক বিষয়ের অনেক কিছুই সরাসরি কুরআন বা হাদীসে নেই। তাই এ সকল বিষয়ের শরীয়তসম্মত সমাধান বের করতে প্রয়োজন হয় ইজতিহাদের।
ইজতিহাদের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা:
১. ইজতিহাদ ইসলামকে যুগোপযোগী রাখতে সহায়তা করে।
২. এতে ইসলামী শরীয়াহতে স্থিতি ও নমনীয়তা দুটোই বজায় থাকে।
৩. ইজতিহাদের মাধ্যমে উম্মাহর জন্য সহজ ও বাস্তবসম্মত পথ নির্ধারণ করা যায়।
৪. এটি ইসলামী জ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. ইসলামী আইনশাস্ত্রকে গতিশীল রাখে।
ইজতিহাদের শর্তাবলি:
ইজতিহাদ করার জন্য যিনি উদ্যোগী হবেন, তাঁর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি থাকা জরুরি। যেমন:
- কুরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞান
- আরবি ভাষা ও ব্যাকরণে পারদর্শিতা
- কিয়াস, ইজমা ও অন্যান্য ফিকহী সূত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা
- ইসলামী নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা
- ন্যায্যতা ও সততার অনুশীলন
উপসংহার:
ইজতিহাদ ইসলামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা ইসলামকে সকল যুগে প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর করে রেখেছে। এটি শুধু ধর্মীয় মাসআলা সমাধানের উপায় নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক চর্চা। সুতরাং, ইজতিহাদ একটি জীবন্ত ও চলমান প্রক্রিয়া, যা ইসলামের উদারতা ও গঠনমূলক চিন্তার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।

