আমি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি ব্যাখ্যা কর
“আমি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি”…
“আমি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি”
আপনার উল্লিখিত উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই উক্তিটির মাধ্যমে নজরুল তাঁর প্রতিবাদের গভীর নৈতিক ভিত্তি এবং উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর সংগ্রাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের (রাজা) বিরুদ্ধে ছিল না, বরং অন্যায়, অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে ছিল।
রাজার বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
নজরুল তাঁর জবানবন্দীতে দৃঢ়ভাবে বলেছেন:
- ব্যক্তিগত বিদ্বেষের অনুপস্থিতি: কবি কোনো রাজা বা শাসনকর্তার ব্যক্তিগত ক্ষমতার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন না। তাঁর বিদ্রোহের কারণ ছিল না রাজার পদচ্যুতি বা সিংহাসন দখল।
- নীতি ও আদর্শের লড়াই: তাঁর বিদ্রোহ ছিল মূলত নীতিগত। তিনি সেই অসঙ্গতি, অসাম্য ও নির্মমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, যা একটি শাসক বা ব্যবস্থা মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়।
অন্যায়ের স্বরূপ
নজরুলের মতে, যে “অন্যায়”-এর বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহ ছিল, তার বিভিন্ন রূপ ছিল:
- স্বার্থপরতা ও শোষণ: রাজা যখন নিজের স্বার্থ, লোভ এবং ভোগ-বিলাসকে প্রাধান্য দেন এবং প্রজাদের শোষণ করে তাদের বঞ্চনার শিকার করেন, তখন তা অন্যায়।
- অবিচার ও নির্মম দমন: সাধারণ মানুষের প্রতি বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তাদের কণ্ঠস্বর নির্মমভাবে দমন করা—এগুলো সবই অন্যায়ের অংশ। রাজা যখন জনকল্যাণ ভুলে শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে অত্যাচারী হয়ে ওঠেন, তখন সেই আচরণই বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
- জনগণের কল্যাণ উপেক্ষা: যখন শাসকশ্রেণী জনগণের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন এবং তাদের মৌলিক অধিকারের প্রতি উদাসীন থাকে, তখন তা নৈতিকভাবে গর্হিত এবং অন্যায়।
মুক্তির আকাঙ্ক্ষা
নজরুল এই বিদ্রোহের মাধ্যমে জনগণের জন্য স্বাধীনতা এবং কল্যাণ চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ যেন অন্যায়, শোষণ এবং নির্যাতনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে। তাঁর প্রতিবাদ ছিল মানবতা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য, যা শুধু সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক।
এই উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের অদম্য বিদ্রোহী সত্তা এবং অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার দৃঢ় সংকল্পের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।