প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ ও ন্যায়বিচার কী?
প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ ও ন্যায়বিচার কী? প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ ও…
প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ ও ন্যায়বিচার কী?
প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ ও ন্যায়বিচার কী?
প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক প্লেটো তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Republic (রাষ্ট্র)–এ সাম্যবাদ (Communism) ও ন্যায়বিচার (Justice) সম্পর্কে সুসংহত দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। তিনি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের প্রেক্ষিতে এই দুটি বিষয়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
✅ প্লেটোর সাম্যবাদের ধারণা
প্লেটোর সাম্যবাদ মূলত সমাজের শাসক (Rulers) ও প্রহরী (Auxiliaries) শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য। তিনি সম্পত্তি, পরিবার ও নারী সম্পর্কে ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণাকে এই শ্রেণিতে বাতিল করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল – ব্যক্তিগত লোভ, পারিবারিক পক্ষপাত এবং সামাজিক বৈষম্য রোধ করা।
🔷 সাম্যবাদের মূল দিকগুলো:
- সম্মিলিত সম্পত্তি (Common Property): শাসক ও সৈনিক শ্রেণি কারো নিজস্ব জমি, টাকা, বাড়ি বা সম্পদ রাখতে পারবে না।
- সম্মিলিত পরিবার (Common Family): কোনো ব্যক্তি তার সন্তান, স্ত্রী বা পরিবার দাবি করতে পারবে না। সন্তানদের লালনপালন করবে রাষ্ট্র।
- নারী-পুরুষ সমান সুযোগ: নারী ও পুরুষের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীও শাসক বা প্রহরী হতে পারবে।
- ব্যক্তিগত স্বার্থহীনতা: ব্যক্তিগত মালিকানার অনুপস্থিতিতে শাসকগণ সবসময় জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে।
🔸 প্লেটো মনে করতেন, এই ধরনের সাম্যনীতি সমাজের ঐক্য রক্ষা করে এবং শাসকদের দুর্নীতি থেকে রক্ষা করে।
✅ প্লেটোর ন্যায়বিচারের ধারণা
প্লেটোর মতে, ন্যায়বিচার হচ্ছে তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি ও শ্রেণি নিজের স্বাভাবিক ও উপযুক্ত কাজটি করে এবং অন্যের কাজের মধ্যে হস্তক্ষেপ না করে।
🔷 ন্যায়বিচারের বৈশিষ্ট্য:
- শ্রেণিভিত্তিক দায়িত্ব পালন: সমাজে তিনটি শ্রেণি — শাসক (জ্ঞানী), প্রহরী (সাহসী), এবং উৎপাদক (ইচ্ছাপ্রবণ)। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কাজ যথাযথভাবে করলে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- “নিজের কাজ নিজে করাই ন্যায়”: প্লেটোর বিখ্যাত সংজ্ঞা – “Justice is doing one’s own work and not meddling with what is not one’s own.”
- আত্মার তিন গুণ ও ন্যায়:
- যুক্তি (Reason) – শাসকের গুণ
- আবেগ (Spirit) – প্রহরীর গুণ
- ইচ্ছা (Appetite) – উৎপাদকের গুণ
আত্মার এই তিনটি অংশ যখন সঠিকভাবে সামঞ্জস্যে থাকে, তখন ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়েই ন্যায়পরায়ণ হয়।
✅ উপসংহার
প্লেটোর মতে, সাম্যবাদ সমাজে লোভ ও বৈষম্য দূর করে এবং শাসকদের নিরপেক্ষ ও জনগণের প্রতি নিবেদিত রাখে। আর ন্যায়বিচার হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য ও নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ফল, যা আদর্শ রাষ্ট্রের ভিত্তি। তাঁর দৃষ্টিতে এই দুটির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি পরিপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ।