সাম্প্রদায়িকতা কী
সাম্প্রদায়িকতা কী সাম্প্রদায়িকতা এমন এক মানসিক ও সামাজিক প্রবণতা যা…
সাম্প্রদায়িকতা কী
সাম্প্রদায়িকতা এমন এক মানসিক ও সামাজিক প্রবণতা যা মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা গোষ্ঠীগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভাজিত করে। সহজভাবে বললে, সাম্প্রদায়িকতা হলো এমন একটি মনোভাব যেখানে নিজের ধর্ম বা সম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতি ঘৃণা, সন্দেহ বা বৈষম্য করা হয়। ইতিহাস জুড়ে দেখা গেছে, সাম্প্রদায়িকতা সমাজে বিভেদ, সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তি
সাম্প্রদায়িকতা সাধারণত জন্ম নেয় অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সামাজিক অবিচার এবং রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে। যখন কোনো গোষ্ঠী নিজের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে, তখন সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ শাসকরা “Divide and Rule” নীতি গ্রহণ করে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। সেই সময় থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন হয়।
সাম্প্রদায়িকতার রূপ ও প্রভাব
সাম্প্রদায়িকতা কেবল ধর্মীয় বিভেদেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলে। সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে জন্ম নেয় বিদ্বেষ, হিংসা, দাঙ্গা ও সংঘর্ষ। অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। এর ফলে সমাজে ন্যায়বিচার, মানবতা ও সহনশীলতার জায়গায় আসে ঘৃণা ও অবিশ্বাস।
সাম্প্রদায়িকতা সমাজের ঐক্য নষ্ট করে। মানুষ পরস্পরের সহযোগিতার পরিবর্তে প্রতিযোগিতা ও শত্রুতার মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এক সময় এই সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় ঐক্যকেও ভেঙে দিতে পারে।
সাম্প্রদায়িকতা রোধের উপায়
সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে সবচেয়ে জরুরি হলো শিক্ষা ও সচেতনতা। স্কুল থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত—সব জায়গায় সহনশীলতা, মানবতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ শেখাতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে মানবিক মূল্যবোধ। গণমাধ্যম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনীতিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে যেন তারা ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করে। রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে সাম্প্রদায়িকতা দমন করতে হবে—আইন প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে।
উপসংহার
সাম্প্রদায়িকতা সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্যই এক ভয়াবহ রোগ। এটি মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং শান্তি ও উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকা এবং একে সামাজিকভাবে বর্জন করা। প্রকৃত মানবতা, সহনশীলতা ও ঐক্যের চর্চাই পারে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে।