মধ্যযুগ বলতে কি বুঝ? মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের উৎসগুলোর বিবরণ দাও
মধ্যযুগ বলতে কি বুঝ? মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের উৎসগুলোর বিবরণ দাও…
মধ্যযুগ বলতে কি বুঝ? মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের উৎসগুলোর বিবরণ দাও
✅ মধ্যযুগ বলতে কী বোঝায়?
মধ্যযুগ বলতে প্রাচীন যুগ ও আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে বোঝানো হয়। দক্ষিণ এশিয়ার তথা বাংলার ইতিহাসে, ১২০১ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় থেকে শুরু করে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত সময়কে সাধারণভাবে মধ্যযুগ হিসেবে ধরা হয়।
এই যুগে বাংলা অঞ্চল মুসলিম শাসনের অধীনে আসে এবং সুলতানী ও মুঘল যুগের অধীনে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা পরিবর্তন ঘটে।
✅ মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের উৎসগুলোর বিবরণ:
মধ্যযুগের বাংলা সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন ঐতিহাসিক উৎস রয়েছে। এগুলো প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
🟦 ১. সাহিত্য ও দলিলভিত্তিক উৎস
১. তবরি খতাব (ইতিহাস গ্রন্থ)
- আরব ও পারস্যের ইতিহাসবিদদের লেখা, যেমন: ইবনে বতুতা, মিণহাজ-উস-সিরাজ প্রমুখের রচনায় বাংলার কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
২. রজম নামা / আকবরনামা / আইন-ই-আকবরি
- মুঘল যুগে লেখা ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ।
- আবুল ফজল লিখিত আকবরনামা ও আইন-ই-আকবরিতে বাংলার সমাজ, প্রশাসন ও অর্থনীতির তথ্য আছে।
৩. ফারসি ভাষার দলিল
- ফারসি ভাষায় লিখিত বহু ইনসক্রিপশন, নামা, আদেশ, সনদ ইত্যাদি বাংলার প্রশাসনিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. বাংলা সাহিত্য (মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি)
- চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, গীতগোবিন্দ ইত্যাদি কাব্যে তৎকালীন সমাজজীবন ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।
৫. ভ্রমণকারীদের বিবরণ
- ইবনে বতুতা, মার্কো পোলো, রালফ ফিটচ, সিজার ফ্রেডরিক প্রমুখ ভিনদেশি পর্যটকদের বিবরণে বাংলার বাণিজ্য, সমাজ ও জীবনযাত্রার চিত্র পাওয়া যায়।
🟦 ২. প্রত্নতাত্ত্বিক ও বস্তুগত উৎস
৬. তাম্রলিপি ও শিলালিপি
- রাজাদের জয়লিপি, দানপত্র বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানা যায়।
- উদাহরণ: আদিনাথ শিলালিপি, হাজিপুরের শিলালিপি, গৌড়ের শিলালিপি।
৭. মুদ্রা বা সikka (Coin)
- বিভিন্ন শাসকের মুদ্রা থেকে রাজনৈতিক ইতিহাস, অর্থনীতি, ধর্মবিশ্বাস ও শাসনের সময়কাল সম্পর্কে তথ্য মেলে।
- যেমন: দিল্লির সুলতানদের বা বাংলার স্বাধীন সুলতানদের মুদ্রা।
৮. স্থাপত্য ও মসজিদ-মন্দির
- গৌড়, বাগেরহাট, পানাম নগরের মসজিদ, দরগাহ, মন্দির ও দুর্গগুলো বাংলার স্থাপত্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি বহন করে।
৯. চিত্রকলা ও ভাস্কর্য
- মধ্যযুগে টেরাকোটা শিল্প ও মন্দিরের অলংকরণ বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্য তুলে ধরে।
✅ উপসংহার:
মধ্যযুগের বাংলা ইতিহাস গঠনে বিভিন্ন সাহিত্যিক, ধর্মীয়, প্রশাসনিক দলিল ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উৎসগুলো আমাদের বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তন, সমাজব্যবস্থা, ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়।