ফখুরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
ফখুরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর। ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব…
ফখুরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ ছিলেন বাংলার স্বাধীন সুলতানদের অন্যতম এবং বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি দিল্লি সুলতানদের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে বাংলায় স্বাধীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনকাল (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রি.) বাংলা তথা উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি স্বর্ণালী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
নিম্নে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করা হলো:
✅ ১. বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সর্বপ্রথম বাংলাকে দিল্লির আধিপত্য থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এটি ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
✅ ২. স্বশাসিত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
তিনি একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলেন। নিজস্ব সেনাবাহিনী, আমলা ও মুদ্রা চালু করে বাংলাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন।
✅ ৩. মুদ্রা চালু
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ নিজের নামে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা জারি করেন, যা তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি বাংলার অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতারও প্রতীক।
✅ ৪. ভূমি ও রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার
তিনি রাজস্ব আদায়ের জন্য সুশৃঙ্খল ভূমি ব্যবস্থা চালু করেন এবং কৃষকদের অধিকার রক্ষা করেন। এতে কৃষির উন্নতি সাধিত হয়।
✅ ৫. সামরিক শক্তি বৃদ্ধি
তিনি একটি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, ফলে তাঁর শাসনকালে বাংলা ছিল নিরাপদ।
✅ ৬. চট্টগ্রাম ও সোনারগাঁয়ের উন্নয়ন
চট্টগ্রামকে বন্দরনগরী হিসেবে এবং সোনারগাঁকে প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন, যা বাণিজ্য ও প্রশাসনের বিকাশে সাহায্য করে।
✅ ৭. শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা
তিনি শিক্ষিত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন এবং পাণ্ডিত্যের সম্মান দিতেন। সোনারগাঁ তাঁর আমলে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
✅ ৮. ইসলামের প্রসার
তিনি ইসলাম প্রচারে উদার ও সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করেন এবং বহু মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন।
✅ ৯. অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা
তাঁর শাসনকালে বাংলা ছিল শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল, যা তাঁর দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনার সাক্ষ্য দেয়।
✅ ১০. রাজনৈতিক দূরদর্শিতা
তিনি দিল্লির দুর্বলতা বুঝে সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তা রক্ষা করতে সক্ষম হন। তাঁর এ সিদ্ধান্ত ছিল দূরদর্শিতার নিদর্শন।
🔚 উপসংহার:
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ একজন সফল, দক্ষ ও দূরদর্শী শাসক ছিলেন। তিনি বাংলার স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশকে সুসংগঠিত করেছিলেন। তাঁর শাসনকাল বাংলা ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর কৃতিত্ব হলো—বাংলার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে স্থিতিশীল, স্বনির্ভর ও উন্নত শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা।