ণত্ব বিধানের যেকোনো চারটি নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
ণত্ব বিধানের যেকোনো চারটি নিয়ম উদাহরণসহ লিখ। ণত্ব বিধান বাংলা…
ণত্ব বিধানের যেকোনো চারটি নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
ণত্ব বিধান বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ন (দন্তন) কখন ণ (মূর্ধন্য ণ)-এ পরিবর্তিত হবে তা নির্ধারণ করে। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষার প্রভাবজাত একটি নিয়ম, যা বাংলা বানানেও অনুসৃত হয়।
এখানে ণত্ব বিধানের চারটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো:
১. ঋ, র, ষ-এর পর ণ
নিয়ম: ঋ (ঋ-কার), র (রেফ, র-ফলা, বা সরাসরি র), এবং ষ (ষ-কার, বা সরাসরি ষ)-এর পর যদি দন্তন থাকে, তবে তা মূর্ধন্য ণ-তে পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ:
- ঋ-এর পর ণ: কৃ + ন = কৃণ (যেমন: কৃষ্ণ), তৃণ।
- র-এর পর ণ: ঋন (ঋণ), রণ, কারণ, দারুণ, মরণ, ঘৃণা, বর্ণনা, প্রাঙ্গণ, হরিণ, জীর্ণ।
- ষ-এর পর ণ: পাষাণ, ভাষণ, ভূষণ, বিশেষণ, দূষণ।
২. ট-বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে ণ
নিয়ম: ট-বর্গীয় ধ্বনি (ট, ঠ, ড, ঢ) এর পূর্বে যদি দন্তন থাকে, তবে তা মূর্ধন্য ণ-তে পরিবর্তিত হয়। এটি মূলত উচ্চারণের সুবিধার জন্য হয়।
উদাহরণ:
- ঘণ্টা, বণ্টন, কুণ্ঠিত, লুণ্ঠন, কাণ্ড, প্রচণ্ড, ঠাণ্ডা, গুণ্ঠন।
৩. প্র, পরা, পরি, নির এই চারটি উপসর্গের পর ণ
নিয়ম: প্র, পরা, পরি, নির—এই চারটি উপসর্গের পর অবস্থিত ‘ন’ মূর্ধন্য ণ-তে পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ:
- প্র: প্রণয়, প্রণাম, প্রমাণ, প্রাণ।
- পরা: পরায়ণ।
- পরি: পরিণয়, পরিণত, পরিণতি, পরিমাপ।
- নির: নির্ণয়।
৪. কিছু স্বতঃসিদ্ধ বা স্বভাবতই ণ হয় এমন শব্দ
নিয়ম: বাংলা ভাষায় কিছু শব্দ আছে যেখানে উপরের কোনো নিয়ম না মেনেও স্বভাবতই মূর্ধন্য ণ ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে “স্বাভাবিক ণত্ব” বলা হয় এবং এগুলোর কোনো নির্দিষ্ট সূত্র নেই, বরং এগুলোকে স্মরণে রাখতে হয়।
উদাহরণ:
- বাণিজ্য, লবণ, কল্যাণ, কোণ, ভাণ, শোণিত, ফণা, গণনা, কণিকা, লাবণ্য, পুণ্য।
ণত্ব বিধান বাংলা বানানের শুদ্ধতা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে, মনে রাখতে হবে যে বাংলা তদ্ভব ও বিদেশি শব্দে সাধারণত ণত্ব বিধানের নিয়ম মানা হয় না, সেখানে সব সময়ই দন্তন ব্যবহৃত হয় (যেমন: ইরান, জার্মান, কুরআন, ধরন, কোরান)।