কৌটিল্যের মতে রজ্যের প্রশাসন ব্যবস্থার কাঠামো কী?

কৌটিল্যের মতে রজ্যের প্রশাসন ব্যবস্থার কাঠামো কী? কৌটিল্য (অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা,…

কৌটিল্যের মতে রজ্যের প্রশাসন ব্যবস্থার কাঠামো কী?

কৌটিল্য (অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা, যিনি চাণক্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও পরিচিত) প্রাচীন ভারতের একজন বিখ্যাত দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে একটি সুসংগঠিত, বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামোর রূপরেখা দিয়েছেন, যা সমকালীন মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রশাসন ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে।

কৌটিল্যের মতে, একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সুশৃঙ্খল প্রশাসন, যার ভিত্তি হলো রাজা ও তার পরামর্শদাতা, বিচারব্যবস্থা, গুপ্তচর নেটওয়ার্ক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। নিচে তাঁর বর্ণিত প্রশাসন কাঠামো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:


১. রাজা (King)

  • প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হলো রাজা।
  • রাজা হতে হবে জ্ঞানী, ন্যায়পরায়ণ, নীতিবান এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে নিবেদিত।
  • রাজাকে নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে মন্ত্রীপরিষদের কাছ থেকে।
  • রাজা আইন প্রণয়ন, ন্যায়বিচার ও যুদ্ধনীতির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।

২. মন্ত্রীপরিষদ (Mantri Parishad)

  • রাজাকে সহায়তা করার জন্য দক্ষ, বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীপরিষদ থাকত।
  • সদস্যরা নীতি নির্ধারণ, শাসন পরিচালনা ও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতেন।

৩. অমাত্যবর্গ (Amatyas – সরকারি কর্মচারীবৃন্দ)

  • কৌটিল্য প্রশাসনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে অমাত্যবর্গকে চিহ্নিত করেন।
  • তারা ছিলেন বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান, যেমন অর্থনীতি, বিচার, রাজস্ব, পুলিশ ইত্যাদি।
  • অমাত্য নির্বাচন হতো যোগ্যতা, সততা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে।

৪. জেলা ও গ্রামীণ প্রশাসন

  • রাজ্যকে ছোট ছোট প্রশাসনিক এককে ভাগ করা হতো (জেলা, জনপদ, গ্রাম)।
  • প্রত্যেক স্তরে একজন প্রধান কর্মকর্তা থাকতেন — যেমন: স্থানি (জেলা কর্মকর্তা), গ্রামিক (গ্রামপ্রধান)।
  • এই স্থানীয় প্রশাসন কর আদায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসেবা তদারক করত।

৫. আর্থিক ও রাজস্ব বিভাগ

  • কর আদায়, মুদ্রানীতি, খাজনা ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ছিল অর্থবিভাগের দায়িত্বে।
  • কর সংগ্রহকারী কর্মকর্তা ছিলেন সামাহার্তৃসন্নিধাতা
  • দুর্নীতিবিরোধী কড়া বিধান ছিল; অনিয়ম প্রমাণ হলে শাস্তি নিশ্চিত।

৬. বিচার বিভাগ

  • বিচার বিভাগ ছিল স্বতন্ত্র ও ন্যায়নিষ্ঠ।
  • আইনভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে রাজা ও বিচারপতিরা ধর্মশাস্ত্র ও রাজনীতিশাস্ত্র অনুসরণ করতেন।
  • কঠোর শাস্তির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা হতো।

৭. গুপ্তচর ও গোয়েন্দা বিভাগ

  • কৌটিল্য প্রশাসনে গুপ্তচরবৃত্তি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতেন গুপ্তচররা।
  • তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছদ্মবেশে কাজ করতেন এবং রাজাকে তথ্য দিতেন।

৮. সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা বিভাগ

  • রাষ্ট্ররক্ষায় সুসংগঠিত সেনাবাহিনী ছিল অপরিহার্য।
  • সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন সেনাপতি, তার অধীনে ছিল পদাতিক, অশ্বারোহী, রথ ও হাতি বাহিনী।
  • যুদ্ধনীতিতে কূটনীতি, গুপ্তচর এবং সামরিক শক্তির সম্মিলিত ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হতো।

উপসংহার

কৌটিল্যের রাষ্ট্রচিন্তায় প্রশাসন ব্যবস্থার কাঠামো ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত, পর্যবেক্ষণভিত্তিক এবং বাস্তববাদী। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজা যদি জ্ঞানী, নীতিনিষ্ঠ ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তবে রাজ্য হবে সমৃদ্ধ ও স্থায়ী। তাঁর এ চিন্তাধারা ভারতবর্ষে প্রশাসনিক ইতিহাসের অন্যতম মৌলিক ও দিকনির্দেশক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

Degree suggestion Facebook group

২য় বর্ষ ডিগ্রি পরিক্ষার সকল বিষয়ের সাজেশন ও এর উত্তর

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *