আইনের শাসন বলতে কী বুঝ?

আইনের শাসন (Rule of Law) একটি মৌলিক নীতি যা রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে আইনই সর্বোচ্চ এবং রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ড আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি সুসংগঠিত ও ন্যায়সংগত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত একটি অপরিহার্য শর্ত। আইনগত শাসন একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়।

ডিগ্রি পরিক্ষার সকল বিষয়ের সাজেশন ও এর উত্তর

Degree suggestion Facebook group

আইনের শাসন

আইনের শাসনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য এখানে তিনটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:

১. লেডি জাস্টিসের সংজ্ঞা: “আইনের শাসন বলতে বোঝায় যে, আইন কেবল সরকারের দ্বারা নয়, বরং সরকারী কর্মকর্তা, বিচারপতি এবং নাগরিকদের সবার জন্য প্রযোজ্য।” এখানে বোঝানো হয়েছে যে, আইন সকলের জন্য সমান এবং এর আওতার বাইরে কেউ নেই। এটি নিশ্চিত করে যে, কেউই আইন ভঙ্গ করতে পারে না এবং সকলের বিরুদ্ধে আইন কার্যকরী হবে।

২. লিন্ডসে হেইসের সংজ্ঞা: “আইনের শাসন হলো সেই নীতি যা নিশ্চিত করে যে, রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ড আইন দ্বারা পরিচালিত হয় এবং নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।” এই সংজ্ঞাটি আইনের শাসনের নৈতিক ভিত্তি তুলে ধরে, যেখানে সরকারের কার্যক্রম আইন অনুসারে হবে এবং নাগরিকদের স্বাধীনতা নিরাপত্তা পাবে।

৩. নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংজ্ঞা: “আইনের শাসন হলো একটি সমাজে নাগরিকদের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান, যেখানে আইনই সর্বোচ্চ, এবং সরকার আইন অনুযায়ী কার্যকরী হয়।” এটি বোঝায় যে, আইন রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিত উভয়ের জন্য একটি নিয়ম হিসেবে কাজ করে, যা রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।

আইনের শাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের ন্যায়বিচার ও অধিকার রক্ষা করা। এটি জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করে। আইনগত শাসন না থাকলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও অন্যায় কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। তাই, একটি সুস্থ সমাজের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়াও, আইনের শাসন জনগণের সরকারকে দায়বদ্ধ করে, যা গণতান্ত্রিক সমাজের একটি অপরিহার্য দিক। এটি নিশ্চিত করে যে, সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হয় এবং নাগরিকদের প্রতি সেবা ও দায়িত্ববোধ বজায় থাকে।

সারসংক্ষেপে, আইনের শাসন কেবল একটি নীতিই নয়, বরং এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি সামাজিক ন্যায়, মর্যাদা ও মানবাধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, এবং নাগরিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে।