রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়? রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয় কারণ…
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয় কারণ এখানে অভিজ্ঞতামূলক তথ্য, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যদিও এটি রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞানের মতো ‘কঠিন বিজ্ঞান’ নয়, তবুও রাষ্ট্রবিজ্ঞান-কে একটি বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করার পেছনে সুসংগঠিত এবং পদ্ধতিগত কারণ রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি এবং মানুষের রাজনৈতিক আচরণ নিয়ে সুসংগঠিত, নিয়মতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার ক্ষেত্র। এই পদ্ধতির প্রয়োগের কারণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান পদবাচ্য লাভ করে।
অ্যারিস্টটল, যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-এর জনক বলা হয়, তিনি একে “সর্বোচ্চ বিজ্ঞান” বা “মাস্টার সায়েন্স” নামে অভিহিত করেছেন। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষকরাও একে সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেন, কারণ এখানে অভিজ্ঞতামূলক তথ্য, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান-কে বিজ্ঞান বলার পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
১. পদ্ধতিগত ও সুসংগঠিত জ্ঞান (Systematic Knowledge):
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এলোমেলো ধারণা নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের উৎপত্তি, সরকারের কার্যাবলী এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞান প্রদান করে। এটি একটি কাঠামোগত পথে বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ করে।
২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ (Application of Scientific Method):
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণায় পর্যবেক্ষণ (Observation), তথ্য সংগ্রহ (Data Collection), শ্রেণিবিভাজন (Classification), এবং পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ (Statistical Analysis) -এর মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩. কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় (Causality Determination):
বিজ্ঞান যেমন কারণ ও ফলের সম্পর্ক অনুসন্ধান করে, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান-ও রাজনৈতিক ঘটনার (যেমন: বিপ্লব, নির্বাচন বা নীতি পরিবর্তন) পেছনের কারণ এবং তার ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করে।
৪. নীতি প্রণয়ন (Formulation of Generalizations/Principles):
দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক আচরণ, ক্ষমতা বা শাসন ব্যবস্থার কিছু সাধারণ নীতি বা সূত্র প্রণয়ন করে, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য হতে পারে।
৫. পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা (Observation and Experimentation):
যদিও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সম্ভব নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নির্বাচন বা নীতির বাস্তব প্রয়োগ পর্যবেক্ষণ করে এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
৬. যথাযথ পরিমাপের চেষ্টা (Attempt at Measurement):
আচরণবাদী বিপ্লবের (Behavioural Revolution) পর রাষ্ট্রবিজ্ঞান-এ জনমত, ভোটিং প্রবণতা বা রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলি পরিমাপের জন্য জরিপ এবং কোয়ান্টিটেটিভ (Quantitative) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৭. নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা (Striving for Objectivity):
একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষক ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে একটি রাজনৈতিক ঘটনা বা নীতিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন, যা বিজ্ঞানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
উপসংহার:
উপসংহারে বলা যায়, মানুষের রাজনৈতিক আচরণ পরিবর্তনশীল হওয়ায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে না পারলেও, এর অধ্যয়নের পদ্ধতি সুসংগঠিত, নিয়মতান্ত্রিক এবং পরীক্ষামূলক তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। এই কারণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান-কে একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অত্যন্ত শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেওয়া হয়।
