ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের অন্তরায়সমূহ উল্লেখ কর

ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের অন্তরায়সমূহ

ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের পথে অনেক অন্তরায় বিদ্যমান। এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতা পুঁজিবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। এখানে “ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের অন্তরায়সমূহ” নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

১. ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব

ঔপনিবেশিক শাসন ভারতীয় উপমহাদেশের পুঁজিবাদ বিকাশের প্রধান অন্তরায়। ব্রিটিশ শাসকেরা এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করে এবং স্থানীয় শিল্পকে ধ্বংস করে। স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে ব্রিটেনে পণ্য উৎপাদনের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

২. জমিদার প্রথা

জমিদার প্রথা ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। জমিদাররা কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চ পরিমাণে খাজনা আদায় করত, যা তাদের নিজস্ব পুঁজির অভাব তৈরি করেছিল। এই প্রথা কৃষি উন্নয়ন ও শিল্পায়নে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।

৩. স্থানীয় শিল্পের ধ্বংস

ব্রিটিশ শাসনের সময় স্থানীয় হস্তশিল্প এবং কুটির শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে স্থানীয় শ্রমশক্তি এবং উদ্যোক্তাদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

৪. শিক্ষার অভাব

উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষার অভাব পুঁজিবাদ বিকাশের আরেকটি বড় অন্তরায়। প্রযুক্তিগত এবং ব্যবসায়িক শিক্ষার অভাবে দক্ষ কর্মী ও উদ্যোক্তা তৈরি হয়নি।

৫. অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব

ভারতীয় উপমহাদেশে সড়ক, রেলপথ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ছিল উল্লেখযোগ্য অন্তরায়।

৬. ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা

পুঁজিবাদী অর্থনীতির জন্য শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল দুর্বল এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে সমস্যা হতো।

৭. কৃষি অর্থনীতির আধিক্য

উপমহাদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভরশীল ছিল। কৃষি থেকে শিল্পায়নের দিকে স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হওয়া পুঁজিবাদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

৮. শ্রমিক শ্রেণির অব্যবস্থা

পুঁজিবাদ বিকাশের জন্য সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণি দরকার। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে শ্রমিক শ্রেণির উন্নয়ন এবং সংগঠন ছিল অপর্যাপ্ত।

৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা

ঔপনিবেশিক শাসন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কালীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পুঁজিবাদ বিকাশের পথে বড় অন্তরায় ছিল। শিল্প ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ কম হয়েছিল।

১০. সামাজিক বৈষম্য

ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক বৈষম্য, যেমন: জাত প্রথা এবং লিঙ্গ বৈষম্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। এই বৈষম্য অনেক মানুষকে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে রেখেছে।

১১. কর ব্যবস্থা

ব্রিটিশ শাসনে কর ব্যবস্থার অত্যধিক চাপ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এই চাপ স্থানীয় বাজার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাধাগ্রস্ত করে।

১২. প্রযুক্তির অভাব

পুঁজিবাদ বিকাশের জন্য প্রযুক্তির অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব শিল্পায়নকে সীমাবদ্ধ করেছে।

১৩. উদ্যোক্তা সংস্কৃতির অভাব

উপমহাদেশে উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং পুঁজির অভাব ছিল। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বিকাশে বাধা দেয়।

১৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার অভাব

ভারতীয় উপমহাদেশে উৎপাদিত পণ্যের মান এবং পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এটি পুঁজিবাদ বিকাশে বাধা দেয়।

১৫. আর্থিক বৈষম্য

অর্থনৈতিক সম্পদের অসম বণ্টন পুঁজিবাদ বিকাশে বড় অন্তরায়। সম্পদশালী জমিদার ও ব্যবসায়ীরা সম্পদ জমা করত, অথচ বৃহৎ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত।

উপসংহার

“ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের অন্তরায়সমূহ” একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। ঔপনিবেশিক শাসন, জমিদার প্রথা, শিক্ষার অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং সামাজিক বৈষম্য পুঁজিবাদ বিকাশে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করেছে। এই অন্তরায়গুলো দূর করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার, শিক্ষার প্রসার, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য।

ডিগ্রি ১ম বর্ষ বিগত সালের প্রশ্ন

Degree suggestion Facebook group

ভারতীয় উপমহাদেশে পুঁজিবাদ বিকাশের অন্তরায়সমূহ

Leave a Comment