১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা দাও

১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা দাও ১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের…

১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা দাও

১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দস্তাবেজ। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। সংবিধানটি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদ দ্বারা প্রণীত হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এখানে ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সাজেশন ডিগ্রি ১ম বর্ষ pdf উত্তর সহ


মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা

১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। সংবিধান অনুযায়ী, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং রাষ্ট্র পরিচালনা হবে গণতান্ত্রিক কাঠামোয়।

২. সমাজতন্ত্রের আদর্শ

এই সংবিধান সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক শোষণমুক্ত একটি সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

৩. ধর্মনিরপেক্ষতা

১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের একটি মৌলিক নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।

৪. মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষা

এই সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাকস্বাধীনতা, সমতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

৫. একক সংসদীয় ব্যবস্থা

১৯৭২ সালের সংবিধানে একক সংসদীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।

৬. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

সংবিধানে বিচার বিভাগকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং নির্বাহী ও আইন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রাখা।

৭. সার্বভৌমত্ব ও সংহতি

এই সংবিধান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক সংহতি বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছে।

৮. নির্বাচনী ব্যবস্থা

১৯৭২ সালের সংবিধান সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধান রেখেছে। এতে জনসাধারণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।

৯. সমানাধিকার

সংবিধান অনুযায়ী, সকল নাগরিকের জন্য সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, বা ভাষার ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়।

১০. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা

সংবিধানে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এটি প্রয়োজনীয়।

১১. রাষ্ট্রের চার মূলনীতি

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে: গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ।

১২. আপৎকালীন ব্যবস্থা

১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতীয় সংকট মোকাবিলার জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে।

১৩. সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি

এই সংবিধানে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে। তবে, এটি একটি সুস্পষ্ট ও কঠিন প্রক্রিয়া।

১৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন

সংবিধানে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা।

১৫. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

১৯৭২ সালের সংবিধান আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছে। এটি জাতিসংঘের চার্টার অনুসারে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

উপসংহার

১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এটি শুধু দেশের পরিচালনা কাঠামো নির্ধারণ করেনি, বরং স্বাধীন বাংলাদেশের আদর্শ, লক্ষ্য, এবং মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং সাম্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল ভিত্তি কী?

উত্তর: ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল ভিত্তি হলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং জাতীয়তাবাদ।

প্রশ্ন ২: সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে?

উত্তর: সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতাকে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং রাষ্ট্রের কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম না থাকার প্রতিশ্রুতি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

প্রশ্ন ৩: মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: মৌলিক অধিকার বলতে বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সমানাধিকার, এবং জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষাকে বোঝায়, যা সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: সংবিধানের কোন ধারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলে?

উত্তর: সংবিধানের ২২তম ধারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলে।

প্রশ্ন ৫: সংবিধানে কতবার সংশোধন আনা হয়েছে?

উত্তর: ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকবার সংশোধন আনা হয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে করা হয়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *