রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও 

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও  রাষ্ট্রের ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক মৌলিক আলোচ্য বিষয়।…

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও 

রাষ্ট্রের ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক মৌলিক আলোচ্য বিষয়। সাধারণভাবে রাষ্ট্র বলতে একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝানো হয় যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী জনগণের উপর সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এর লক্ষ্য হলো সমাজের সদস্যদের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি ও কার্যকর করা এবং তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। বিভিন্ন দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দিয়েছেন, তবে মূল ধারণাটি একই।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাদের অভিজ্ঞতা (Experience) ও বিশেষ জ্ঞানের (Expertise) ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, যা এর কর্তৃত্ব (Authoritativeness) এবং নির্ভরযোগ্যতা (Trustworthiness) প্রমাণ করে। যেমন:

অধ্যাপক গার্নার (J.W. Garner): “রাষ্ট্র হলো কম বা বেশি সংখ্যক এমন একটি জনসমাজ যারা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যারা বহিশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বা প্রায় মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে যার প্রতি অধিকাংশ অধিবাসী স্বাভাবিকভাবে আনুগত্য পোষণ করে।”

উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson): “কোন নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।”

এই সংজ্ঞাগুলির বিশ্লেষণই প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র হলো একটি সুসংবদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন যা মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে।

রাষ্ট্রের উপাদান 

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে চারটি মৌলিক উপাদান পাওয়া যায়। এই চারটি উপাদানের সমন্বয়েই একটি রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি স্বীকৃত সত্য (Expertise)।

১. জনসমষ্টি (Population): রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো জনসমষ্টি। জনসমষ্টি ছাড়া কোনো রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। এই জনসমষ্টির সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে।

২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড (Territory): একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। এই ভূখণ্ড বলতে স্থলভাগ, জলভাগ ও আকাশসীমাকে বোঝায়।

৩. সরকার (Government): সরকার হলো রাষ্ট্রের বিমূর্ত ধারণার বাস্তব রূপ। এটি এমন এক সংগঠন যা রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং জনগণের ইচ্ছা কার্যকর করে।

৪. সার্বভৌমত্ব (Sovereignty): এটি রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রাণশক্তি। সার্বভৌমত্ব হলো সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। এর দুটি দিক থাকে: অভ্যন্তরীণ (নিজের সীমানার মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষমতা) এবং বাহ্যিক (বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত)।


রাষ্ট্রের গুরুত্ব ও কার্যাবলী

একটি সুসংগঠিত রাষ্ট্র জনগণের জীবনের শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করে। রাষ্ট্রের প্রধান কার্যাবলীগুলোর মধ্যে আইন প্রণয়ন, প্রশাসন পরিচালনা, জননিরাপত্তা বজায় রাখা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা অন্যতম। আধুনিক রাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল সাধন করে।

১ম বর্ষ ডিগ্রি সাজেশন ২০২৫

Download pdf

Join our Facebook Group

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *