তাহরাত এর শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।
‘তাহারাত’ (পবিত্রতা) ইসলাম ধর্মে একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নামাযসহ বিভিন্ন ইবাদতের পূর্বশর্ত। ‘তাহারাত’ শব্দটি আরবি “طَهَارَة” থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা। শরীয়তের দৃষ্টিতে, তাহারাত মানে হচ্ছে—নিজেকে নাপাকি, অপবিত্রতা ও ময়লা থেকে মুক্ত রাখা।
🔹 তাহারাতের প্রধান শ্রেণিবিভাগ (তাহারাতের প্রকারভেদ)
তাহারাত মূলত দুই ভাগে বিভক্ত:
১. তাহারাতুল বাতিন (আন্তরিক বা আত্মিক পবিত্রতা):
- এটি অন্তরের পবিত্রতা বোঝায়।
- হিংসা, রিয়া (লোক দেখানো), কুপ্রবৃত্তি, অহংকার, হিংস্রতা ইত্যাদি মনোব্যাধি থেকে আত্মাকে মুক্ত রাখাকে বোঝায়।
- এটি ইখলাস বা নিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. তাহারাতুল জাহির (বাহ্যিক বা শারীরিক পবিত্রতা):
- এটি শারীরিক পবিত্রতা বোঝায়।
- এর মধ্যে শরীর, কাপড়, জায়গা ও ব্যবহৃত জিনিসপত্রকে অপবিত্রতা থেকে পরিষ্কার রাখা অন্তর্ভুক্ত।
🔹 তাহারাতুল জাহির-এর বিস্তারিত শ্রেণিবিভাগ
তাহারাতুল জাহিরকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করা যায়:
১. তাহারাত মিনাল হাদস (অজু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন):
- হাদস দুই প্রকার:
- হাদস আসগর: ছোট নাপাকি (যেমন—প্রাকৃতিক কাজের পর), এতে অজু ফরজ।
- হাদস আকবার: বড় নাপাকি (যেমন—জন্মসঙ্গ, হায়য-নেফাস), এতে গোসল ফরজ।
২. তাহারাত মিনান নাজাসাহ (নাপাক বস্তু থেকে পবিত্রতা):
- দেহ, কাপড় ও নামাজের স্থান থেকে নাপাক বস্তু (যেমন—মূত্র, পায়খানা, রক্ত ইত্যাদি) দূর করা।
৩. তাহারাতুল মাকান (স্থান বা পরিবেশের পবিত্রতা):
- নামাজের জায়গা পবিত্র রাখা।
- অপবিত্র কিছু থাকলে তা পরিষ্কার করে নামাজ আদায় করতে হয়।
৪. তাহারাতুল মلبুস (পরিধেয় বস্ত্রের পবিত্রতা):
- কাপড় পরিষ্কার ও নাপাকি মুক্ত থাকা জরুরি।
🔹 তাহারাত অর্জনের উপায়সমূহ:
- ওযু (অজু)
- গোসল (পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা)
- তায়াম্মুম (জল না পাওয়া বা ব্যবহার করতে না পারলে বিকল্পভাবে মাটি ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন)
- নাজাসাত দূরীকরণ (শরীর, কাপড় ও স্থান থেকে অপবিত্র বস্তু সরানো)
✅ উপসংহার:
তাহারাত ইসলামি জীবনধারার অন্যতম স্তম্ভ। আত্মিক ও বাহ্যিক উভয় দিক থেকেই পবিত্রতা অর্জন না করলে কোনো ইবাদতই পূর্ণতা পায় না। তাই মুসলিম জীবনে তাহারাতের গুরুত্ব অপরিসীম।