অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ আলোচনা কর

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রতীক। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর স্থিতিশীলতাও এর অন্তর্ভুক্ত। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ যত বেশি সুসংহত এবং কার্যকর হবে, তত দ্রুত সেই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এই পূর্বশর্তসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কী?

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে বোঝানো হয় এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান, আয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নত হয়। এটি কেবল পরিসংখ্যানগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং সামগ্রিক মানব উন্নয়নের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ

১. শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। একটি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি কেবল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে না, বরং প্রযুক্তি গ্রহণ এবং উদ্ভাবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. অবকাঠামোগত উন্নয়ন

টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ অবকাঠামো অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে আধুনিক অবকাঠামো গঠন একটি প্রধান ভিত্তি।

৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

উন্নয়নের অন্যতম বাধা হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত।

৪. সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন

দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান বাধা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।

৫. বিনিয়োগবান্ধব নীতি

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সহজ নীতিমালা ও কর ছাড় প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশ তৈরি অপরিহার্য।

৬. কৃষি খাতে আধুনিকীকরণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশ কৃষি নির্ভর। কৃষির আধুনিকীকরণ এবং কৃষিপণ্যের রপ্তানির সুযোগ বাড়ানোও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম।

৭. শিল্পায়ন ও রপ্তানি বৈচিত্র্য

শুধুমাত্র তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল না থেকে প্রযুক্তি, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি খাতেও রপ্তানি বাড়াতে হবে। শিল্পায়ন হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের অন্যতম প্রধান উপাদান।

৮. নারী ও যুবদের অন্তর্ভুক্তি

নারী ও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত করাও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের অন্যতম। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি করে।

৯. বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম।

১০. পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশল

অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হতে হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই তা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কৌশলও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহে বিবেচ্য।

১১. প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ

ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে সরকারি ও বেসরকারি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহে অপরিহার্য অংশ।

১২. সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি সমতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।

১৩. টেকসই শহরায়ণ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আবাসন খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিকল্পিত শহর গঠনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

১৪. আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংকিং সুবিধা

গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য ব্যাংকিং সুবিধা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা সম্প্রসারণও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহের অন্যতম অংশ।

১৫. গবেষণা ও উদ্ভাবন উৎসাহিতকরণ

স্থানীয় সমস্যার স্থানীয় সমাধান খুঁজে বের করতে গবেষণা এবং উদ্ভাবন অপরিহার্য। গবেষণা-বান্ধব অর্থনীতি গঠন করাও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহে অন্তর্ভুক্ত।


উপসংহার

বাংলাদেশ একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য “অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ” যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। উন্নয়নের জন্য শুধু প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো যথেষ্ট নয়, বরং তা টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব হওয়া দরকার।

“অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তসমূহ” শুধু নীতিনির্ধারকদের হাতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ, শিক্ষাব্যবস্থা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং সামাজিক উদ্যোগগুলোও এই প্রক্রিয়ায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথকে আরও মজবুত ও টেকসই করতে হলে এই পূর্বশর্তগুলোকে অবহেলা না করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

Degree suggestion Facebook group

২য় বর্ষ ডিগ্রি পরিক্ষার সকল বিষয়ের সাজেশন ও এর উত্তর

Leave a Comment