নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ ভূমিকা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic…

নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ

ভূমিকা

নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age) মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ যুগে মানুষ কৃষিকাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং স্থায়ী বসতি স্থাপনের মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটায়। নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বুঝতে হলে এ যুগের মানুষের জীবনধারা, কৃষ্টি ও সভ্যতার নানা দিক বিশ্লেষণ করতে হবে।

ডিগ্রি ১ম বর্ষ বিগত সালের প্রশ্ন

Degree suggestion Facebook group


নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক বৈশিষ্ট্যসমূহ

  1. স্থায়ী বসতির সূচনা
    নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতিতে রূপান্তরিত হয়। গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে ছোট ছোট গ্রাম গড়ে ওঠে।
  2. কৃষিকাজের বিকাশ
    এই যুগে মানুষ শস্য উৎপাদনের পদ্ধতি রপ্ত করে। এটি শুধু খাদ্যসংস্থান নয়, সামাজিক বিন্যাসেও বড় পরিবর্তন আনে।
  3. পারিবারিক কাঠামো গঠন
    পরিবার এই যুগে সমাজের কেন্দ্রীয় একক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  4. সম্পত্তির ধারণা
    জমি ও কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত সম্পত্তির ধারণা এ যুগে উদ্ভব হয়।
  5. সম্প্রদায়ের বিকাশ
    মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে এবং একে অপরকে সাহায্য করার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

নব্য প্রস্তর যুগের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ

  1. পাথরের সরঞ্জামের উন্নতি
    এ যুগে বিভিন্ন কার্যকরী পাথরের সরঞ্জাম যেমন কুঠার, বর্শা ইত্যাদি তৈরি হয়।
  2. মৃৎশিল্পের উদ্ভব
    মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশে মৃৎশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্য সংরক্ষণ এবং রান্নার জন্য মাটির পাত্র তৈরি করা হয়।
  3. বিনিময় ব্যবস্থার সূচনা
    পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থনীতির সূচনা হয়।
  4. ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান
    নব্য প্রস্তর যুগে ধর্মীয় চর্চার প্রচলন ঘটে। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা ও ধর্মীয় আচার এ যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  5. শিল্প ও নকশার উন্নতি
    গুহাচিত্র ও স্থাপত্যকলার উন্নতির মাধ্যমে এ যুগের মানুষ তাদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে।
  6. জন্ম ও মৃত্যুর আচার
    সমাধি নির্মাণ এবং মৃত্যুর পরে আচার-অনুষ্ঠান পালনের প্রথা এই যুগে দেখা যায়।

নব্য প্রস্তর যুগের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

  1. সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস
    সম্পত্তি এবং কাজের ভিত্তিতে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি গড়ে ওঠে।
  2. প্রযুক্তির ব্যবহার
    কৃষিকাজ ও গৃহস্থালির কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার এ যুগে উল্লেখযোগ্য ছিল।
  3. পরিবেশের উপর প্রভাব
    কৃষিকাজ ও বসতি স্থাপনের কারণে পরিবেশে মানুষের প্রভাব বাড়ে।
  4. সংস্কৃতির স্থানান্তর
    বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক ধারণা ও প্রযুক্তির স্থানান্তর ঘটে।

উপসংহার

নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ মানব সভ্যতার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ যুগে কৃষি, স্থায়ী বসতি, ধর্ম, এবং শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন এক নতুন সমাজব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *