ডিগ্রী ৩য় বর্ষ সমাজকর্ম ৬ষ্ঠ পত্র সাজেশন ২০২৫
ডিগ্রী ৩য় বর্ষ সমাজকর্ম ৬ষ্ঠ পত্র সাজেশন ২০২৫ ডিগ্রী তৃতীয়…
ডিগ্রী ৩য় বর্ষ সমাজকর্ম ৬ষ্ঠ পত্র সাজেশন ২০২৫
ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা ২০২৩ অনুষ্ঠিত ২০২৫
বিভাগঃ BA-BSS
বিষয়ঃ সমাজকর্ম যষ্ঠ পত্র (মাঠকর্ম শিক্ষা: 132103)
ক বিভাগ (অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
*পূর্ণরূপ লিখ: NGO, BRAC, BIRDEM, DAB, CARE, NASW.
উঃ NGO-এর পূর্ণরূপ হলো- Non Government Organization.
BRAC-এর পূর্ণরূপ হলো-Bangladesh Rural Advancement Committee.
BIRDEM-এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh
Institute of Research and Rehabilitation in Diabeties Endocrine and Metabolite Disorders.
DAB-এর পূর্ণরূপ হলো- Doctors Association of Bangladesh.
CARE-এর পূর্ণরূপ হলো-Co-operestive for American Relief Everywhere.
NASW এর পূর্ণরূপ হলো- National Association of Social Workers. .com
১। মাঠকর্ম অনুশীলনে কর্মদিবস কত দিন?
অথবা, মাঠকর্মে কর্ম দিবস কত দিন? অথবা, মাঠকর্মের সময়কাল লিখ।
উঃ ৬০ কর্ম দিবস।
২। Field work Manual’ গ্রন্থটি কে সম্পাদনা করেছেন? অথবা, Field work Manual- কে লিখেছেন?
উঃ Field work Manual- গ্রন্থটি এম এ মোমেন লিখেছেন।
৩। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
অথবা, BRAC এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
উঃ স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
৪। ‘Rapport’ শব্দের অর্থ কী?
অথবা, Rapport (র্যাপোট) কী?
অথবা, Rappo কি?
উঃ পেশাগত সম্পর্ক।
৫। “ঢাকা প্রজেক্ট” কখন চালু করা হয়েছিল?
অথবা, বাংলাদেশে শহর সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম কখন চালু হয়?
উঃ বাংলাদেশে শহর সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম ১৯৫৫ সালে চালু হয়।
৬। সমাজকর্ম শিক্ষার অগ্রদূত কে? উঃ সমাজকর্ম শিক্ষার অগ্রদূত হলেন এনা এল, ডয়েস।
৭। গ্রামীণ সমাজসেবার বর্তমান নাম কী?
উঃ গ্রামীণ সমাজসেবার বর্তমান নাম হলো পল্লি সমাজসেবা।
৮। সমাজকর্মের প্রথম প্রশিক্ষণ স্কুল কোথায় স্থাপিত হয়?
উঃ আমেরিকার নিউইয়র্ক।
৯। সমাজকর্মে Client কে?
উঃ সমাজকর্মে সাহায্যার্থীকে Client বলে।
১০। বাংলাদেশে কোন ধরনের মাঠকর্ম বিদ্যমান?
উঃ বাংলাদেশে নির্দিষ্ট মাঠকর্ম বিদ্যমান।
১১। মাঠকর্মে এ্যাসাইনমেন্ট কী?
উঃ মাঠকর্মে এ্যাসাইনমেন্ট হলো শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত কাজের তালিকা।
১২। মাঠকর্মের সর্বশেষ ধাপ কোনটি?
উঃ প্রতিবেদন লিখন।
১৩। RSS কত সালে চালু হয়?
অথবা, গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম কত সালে
উঃ ১৯৭৪ সালে।
১৪। ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের দুইটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উঃ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের দুইটি বৈশিষ্ট্য হলো সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ ও গবেষণা বা অনুধ্যান।
১৫। Supervision গ্রন্থটি কে লিখেছেন?
অথবা, ‘Supervision’ গ্রন্থটি কার লেখা?
উঃ Supervision গ্রন্থটি লিখেছেন- D. PaulChowdhury.
১৬। হাসপাতাল সমাজসেবার ভূতপূর্ব নাম কী?
উঃ হাসপাতাল সমাজসেবার ভূতপূর্ব নাম হলো চিকিৎসা সমাজকর্ম।
১৭। সমাজকর্ম কোন দেশে বিকাশ লাভ করে?
উঃ সমাজকর্ম আমেরিকায় বিকাশ লাভ করে।
১৮। NASW কখন গঠিত হয়?
উঃ NASW ১৯৫৫ সালে গঠিত হয়।
১৯। গৃহপরিদর্শন কাকে বলে?
অথবা, গৃহপরিদর্শন কী?
উঃ সমাজকর্মী কর্তৃক সাহায্যার্থীর সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহের জন্য তার বাসস্থানে উপস্থিত হওয়াকে গৃহ পরিদর্শন বলে।
২০। সমাজকর্ম পেশার অগ্রদূত কে?
অথবা, সমাজকর্ম পেশার রূপকার কে?
উঃ সমাজকর্ম পেশার রূপকার ম্যারি রিচমন্ড।
২১। চলমান মাঠকর্ম কী?
উঃ চলমান মাঠকর্ম হচ্ছে সেই ধরনের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ যেখানে একই সাথে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার সাথে সাথে ব্যবহারিক শিক্ষাও অর্জিত হয়।
২২। “মাঠকর্ম অনুশীলন হলো সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ অংশ”-উক্তিটি কার?
উঃ “মাঠকর্ম অনুশীলন হলো সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ অংশ”- উক্তিটি করেন Hollis and Taylor.
২৩। এজেন্সি তত্ত্বাবধান কী?
উঃ এজেন্সি তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের তদারকি করা।
২৪। নির্দিষ্ট মাঠকর্ম কি?
উঃ শিক্ষার্থীরা যখন একটি নির্দিষ্ট সংস্থায় দু’জন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে মাঠকর্ম সম্পন্ন করার জন্য সংযুক্ত হয় তখন তাকে নির্দিষ্ট মাঠকর্ম বলে।
২৫। মাঠকর্মের মূল লক্ষ্য কী?
উঃ মাঠকর্মের মূল লক্ষ্য হলো সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করা।
২৬। “Training School of Applied Philanthropy” এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
উঃ “Training School of Applied Philanthropy” এর প্রতিষ্ঠাতা ম্যারি রিচমন্ড।
২৭। জাতীয় কিশোর সংশোধনী প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম কী?
উঃ জাতীয় কিশোর সংশোধনী প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম হলো- কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র।
২৮। সমাজকর্মীর একটি নৈতিক মানদণ্ড উল্লেখ কর।
উঃ সামাজিক ন্যায়বিচার।
২৯। সংস্থাপন কী?
উঃ কোনো শিক্ষানবিসকে যখন কোনো সংস্থার সাথে যুক্ত করা হয় এবং সেখানে কোনো দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয় তখন তাকে সংস্থাপন বলে।
৩০। মাঠকর্ম কাকে বলে?
উঃ যে অনুশীলনধর্মী প্রক্রিয়ায় কোন বিষয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও কলাকৌশল মানবকল্যাণে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তাকে মাঠকর্ম বলে।
৩১। মাঠকর্ম কয় প্রকার ও কি কি?
অথবা, মাঠকর্ম কত প্রকার?
অথবা, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কত প্রকার ও কি কি?
উঃ মাঠকর্ম দুই প্রকার। যথা- ১. নির্দিষ্ট মাঠকর্ম ও ২. চলমান মাঠকর্ম।
৩২। তত্ত্বাবধানের প্রকারভেদ লিখ।
উঃ ৪ প্রকার। যথা- ১. প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান, ২. সেচ্ছাসেবী তত্ত্বাবধান, ৩. সাংগঠনিক তত্ত্বাবধান ও ৪. আর্থিক তত্ত্বাবধান।
৩৩। সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ কোনটি?
উঃ সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সংস্থাপন।
৩৪। প্রতিবেদন কী?
অথবা, মাঠকর্মে প্রতিবেদন কী?
উঃ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সম্পাদন শেষে ছাত্রছাত্রীরা লিখিত আকারে যে কর্ম তত্ত্বাবধায়কের নিকট প্রদান করে তাই মাঠকর্ম প্রতিবেদন।
৩৫। প্রবেশন কোন শব্দ থেকে এসেছে?
উঃ প্রবেশন ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে।
৩৬। কখন এবং কোথায় সর্বপ্রথম চিকিৎসা সমাজকর্ম চালু হয়?
উঃ ১৯০৫ সালে আমেরিকায়।
৩৭। উন্নয়ন সংস্থা বলতে কী বোঝায়?
উঃ যে সব সংস্থা দেশের সার্বিক উন্নয়নে নিয়োজিত থাকে তাদের উন্নয়ন সংস্থা বলে।
৩৮। সমাজকর্ম অনুশীলন করেন কারা?
উঃ সমাজকর্ম অনুশীলন করেন সমাজকর্মীরা।
৩৯। গ্রামীণ ব্যাংকের ‘পরীক্ষামূলক প্রকল্প’ প্রথম কোথায় চালু করা হয়?
উঃ চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে।
৪০। বারডেম কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত।
৪১। তত্ত্বাবধানের একটি বৈশিষ্ট্য লিখ।
উঃ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।
৪২। সমাজকর্মে সর্বপ্রথম পেশাগত শিক্ষার গুরুত্ব উত্থাপন করেন কে?
উঃ Anna L. Dawes.
৪৩। প্রসেস রেকর্ডিং কী?
উঃ প্রসেস রেকর্ডিং হলো ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনন্দিন কার্যাবলি খাতায় সংরক্ষণ করা।
৪৪। মনিটরিং কী?
উঃ কোন কাজ বা ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করা, দেখাশুনা করা বা পরীক্ষা করাকে মনিটরিং বলে।
খ-বিভাগ (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
১। মাঠকর্মের ও তত্ত্বাবধানের ধারণা দাও। ১০০%
২। মনোচিকিৎসা সমাজকর্ম ববলতে কি বুঝ? ১০০%
৩। সমাজকর্মের নৈতিক মানদণ্ডগুলো কী কী? ১০০%
৪। কেস স্টাডি ও কেস ব্যবস্থাপনার পার্থক্য লেখ। ১০০%
অথবা, প্রবেশন ও প্যারোলের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
৫। উত্তম তত্ত্বাবধানের পূর্বশর্তসমূহ উল্লেখ কর। ১০%
অথবা, উত্তম সাক্ষাৎকারের শর্তাবলি লিখ।
৬। সাক্ষাৎকার কী? সাক্ষাৎকারের সীমাবদ্ধতা লেখ। ১০০%
৭। কেস ব্যবস্থাপনা কী? কেস ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি লিখ।১০০%
৮। মাঠকর্মের উদ্দেশ্যাবলি উল্লেখ কর। ১০০%
or , মাঠকর্মের সমস্যাবলি উল্লেখ কর।
৯। মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের ধাপগুলো লিখ। ১০০%
১০। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বলতে কী বোঝায়? ১০০%
১১। মাঠকর্ম সংস্থাপনের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী? ৯৯%
১২। মাঠকর্মের প্রকারভেদ উল্লেখ কর। ৯৯%
১৩। পর্যবেক্ষণের প্রকারভেদগুলো উল্লেখ কর। ৯৮%
অথবা, পর্যবেক্ষণের অসুবিধাগুলো লিখ।
১৪। মাঠকর্মে একজন তত্ত্বাবধায়কের গুণাবলি লিখ। ৯৮%
১৫। সহকর্মীদের প্রতি সমাজকর্মীর নৈতিক দায়িত্ব কি? ৯৫%
গ-বিভাগ (রচনামূলক প্রশ্ন)
১। মাঠকর্ম কি? সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য মাঠকর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর. ১০০%
২। মাঠকর্মে একজন তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা বর্ণনা কর। ১০০
অথবা, তত্ত্ববধানের কৌশলসমূহ কী? মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
৩। মাঠকর্মে সংস্থাপনের নির্দেশিকাসমূহের বিবরণ দাও। ১০০%
৪। ঘটনা লিপিবদ্ধকরণ কী? মাঠকর্মে ঘটনা লিপিবদ্ধকরণের গুরুত্ব বর্ণনা কর। ১০০%
৫। কেস স্টাডির জন্য তথ্য তথ্য সংগ্রহের উৎস এবং কৌশলের বিবরণ দাও। ১০০%
৬। মাঠকর্মে শিক্ষার্থীদের কার্যসম্পাদনের প্রকৃতি বর্ণনা কর। ১০০%
৭। মাঠকর্মে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সমস্যা ও সমাধানের উপায় আলোচনা কর। ১০০%
৮। নৈতিক মানদণ্ড কি? সাহায্যার্থীর প্রতি সমাজকর্মীর নৈতিক দায়িত্বগুলো আলোচনা কর।
৯। তথ্যসংগ্রহের কৌশল হিসাবে গৃহপরিদর্শন ও ঘটনা লিপিবদ্ধকরণ আলোচনা কর। ১০০%
১০। সংশোধনমূলক কার্যক্রম কি? বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমসমূহের বর্ণনা দাও। ৯৯%
অথবা, সংশোধনমূলক কার্যক্রমে মাঠকর্মীর ভূমিকা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।
১১। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মাঠকর্মীর ভূমিকা আলোচনা কর। ৯৯%
১২। ডায়াবেটিস কী? বাংলাদেশের ডায়াবেটিস সমিতির কার্যাবলি বর্ণনা কর। ৯৯%
অথবা, ব্র্যাকের উদ্দেশ্যসমূহ কী কী? এর কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
১। মনো-সামাজিক অনুধ্যান বলতে কী বুঝ?
মনো-সামাজিক অনুধ্যান বা সাইকো-সোশ্যাল স্টাডি (Psycho-social Study) হলো সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা কোনো ব্যক্তির সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি গভীরভাবে বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির ভেতরের (মনস্তাত্ত্বিক) ও বাইরের (সামাজিক ও পরিবেশগত) উভয় উপাদান বিশ্লেষণ করে সমস্যাটির একটি সামগ্রিক চিত্র তৈরি করা।
- মনস্তাত্ত্বিক দিক (Psycho): এই অংশে ব্যক্তির আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, মনোভাব, মানসিক চাপ, শৈশবের অভিজ্ঞতা, এবং বর্তমান মানসিক অবস্থার ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়।
- সামাজিক দিক (Social): এই অংশে ব্যক্তির পারিপার্শ্বিকতা যেমন— পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়।
সহজ কথায়, কোনো ব্যক্তি কেন সমস্যায় ভুগছে, তা জানতে যখন তার মনোজগৎ ও বাইরের পরিবেশ— দুটোই একসঙ্গে পরীক্ষা করা হয়, তখন তাকে মনো-সামাজিক অনুধ্যান বলা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মের ক্ষেত্রে এটি একটি অপরিহার্য ধাপ।
২। সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝ?
সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া (Problem-Solving Process) বলতে কোনো উদ্ভূত জটিলতা বা সমস্যাকে চিহ্নিত করা, তার কারণ অনুসন্ধান করা, এবং একটি যৌক্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়াকে বোঝায়। সমাজকর্মের প্রেক্ষাপটে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সাহায্যপ্রার্থী (Client) এবং সমাজকর্মী (Social Worker) যৌথভাবে কাজ করেন।
সাধারণত, এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপে সম্পন্ন হয়:
১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ: সমস্যা কী এবং এর প্রকৃত প্রকৃতি কেমন, তা পরিষ্কারভাবে বোঝা।
২. তথ্য সংগ্রহ ও অনুধ্যান: সমস্যার কারণ, পটভূমি ও প্রভাব সম্পর্কে মনো-সামাজিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
৩. লক্ষ্য নির্ধারণ: সমাধানের জন্য বাস্তবসম্মত ও পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য স্থির করা।
৪. কর্মপরিকল্পনা: লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করা।
৫. বাস্তবায়ন: পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপগুলো কার্যকর করা।
৬. মূল্যায়ন ও সমাপ্তি: কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা, ফলাফল মূল্যায়ন করা, এবং সমস্যা সমাধানের পর সেবা সমাপ্ত করা।
৩। ব্যক্তি ও দল সমাজকর্মের সংজ্ঞা দাও।
ব্যক্তি সমাজকর্ম (Casework)
ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের একটি প্রাথমিক পদ্ধতি, যা এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে— এটি হলো সমস্যাগ্রস্ত একক ব্যক্তিকে (Single Individual) তার পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে কার্যকরভাবে মানিয়ে চলতে সাহায্য করার একটি প্রক্রিয়া। এর লক্ষ্য হলো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ও সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে সে নিজে তার সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়। এই প্রক্রিয়ায় মনো-সামাজিক অনুধ্যানের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তির সমস্যার জন্য স্বতন্ত্রভাবে সেবা ও সহায়তা প্রদান করা হয়।
দল সমাজকর্ম (Group Work)
দল সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের আরেকটি প্রাথমিক পদ্ধতি, যা ছোট আকারের একটি দলের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া (Interaction) এবং দলীয় পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালনের দক্ষতা ও মানসিক সক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দলীয় প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে সদস্যদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধান, সামাজিক গুণাবলি বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করা।
৪। ব্যক্তি সমাজকর্মের উদ্দেশ্যাবলি কী?
ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ:
- ১. নিরাময়মূলক উদ্দেশ্য: সমস্যার তীব্রতা হ্রাস করা এবং ব্যক্তিকে তার সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা।
- ২. প্রতিরোধমূলক উদ্দেশ্য: সমস্যা যাতে ভবিষ্যতে আবার না হয়, তার জন্য ব্যক্তির দুর্বলতার দিকগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
- ৩. উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্য: ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো এবং তার পরিবেশের সম্পদগুলোকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
- ৪. সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা: ব্যক্তিকে তার পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে কার্যকরভাবে তার ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলা।
- ৫. আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টি: ব্যক্তিকে এমনভাবে ক্ষমতায়ন করা, যাতে সে অপরের সাহায্য ছাড়াই নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদানগুলো লিখ।
ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে নিম্নলিখিত চারটি মৌলিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ:
১. ব্যক্তি (The Person): যিনি সাহায্য চান, বা যার সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন।
২. সমস্যা (The Problem): ব্যক্তির প্রয়োজন বা যে সমস্যার কারণে সে সাহায্যপ্রার্থী হয়েছে।
৩. স্থান/সংস্থা (The Place): যে প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সমাজকর্মের সেবা প্রদান করে (যেমন— হাসপাতাল, ক্লিনিক, সমাজসেবা অফিস)।
৪. প্রক্রিয়া (The Process): সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মী ও সাহায্যপ্রার্থীর মধ্যে যে নিয়মতান্ত্রিক মিথস্ক্রিয়া ও কৌশল অবলম্বন করা হয়।
৫। অন্তঃদল ও বহিঃদল কাকে বলে? দলের প্রকারভেদ লিখ।
অন্তঃদল (In-group)
অন্তঃদল বলতে সেই সামাজিক দলকে বোঝায়, যার প্রতি একজন ব্যক্তি মানসিক ঘনিষ্ঠতা, একাত্মতা ও ‘আমরা’ বোধ অনুভব করে। এই দলের প্রতি সদস্যের আনুগত্য ও সহযোগিতা থাকে। এই দলের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি নিজেকে ‘আমরা’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
- উদাহরণ: নিজের পরিবার, নিজ দেশের মানুষ, নিজ ধর্মীয় গোষ্ঠী।
বহিঃদল (Out-group)
বহিঃদল বলতে সেই সামাজিক দলকে বোঝায়, যার প্রতি একজন ব্যক্তি কোনো একাত্মতা বা ঘনিষ্ঠতা অনুভব করে না এবং যার সদস্য হিসেবে সে নিজেকে বিবেচনা করে না। এই দলকে সাধারণত ‘তারা’ বা ‘অন্যরা’ হিসেবে দেখা হয়।
- উদাহরণ: অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মানুষ, একটি ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের বাইরের সদস্যরা।
দলের প্রকারভেদ (Types of Groups)
সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দলকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। প্রধান প্রকারভেদগুলো হলো:
| প্রকারভেদের ভিত্তি | দলের প্রকারভেদ | বৈশিষ্ট্য | 
| সম্পর্কের ভিত্তিতে | প্রাথমিক দল (Primary Group) | সদস্যদের মধ্যে সরাসরি, ঘনিষ্ঠ ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক (যেমন— পরিবার, খেলার সাথী)। | 
| গৌণ দল (Secondary Group) | সম্পর্কগুলো আনুষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত নয় এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক (যেমন— রাজনৈতিক দল, অফিস)। | |
| সংগঠনের ভিত্তিতে | স্বেচ্ছামূলক দল (Voluntary Group) | সদস্যপদ ঐচ্ছিক, নিজের ইচ্ছায় যোগদান করা হয় (যেমন— এনজিও, ক্লাব)। | 
| বাধ্যতামূলক দল (Involuntary Group) | সদস্যপদ জন্মগত বা পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে হয় (যেমন— জাতি, বর্ণ, রাষ্ট্র)। | |
| সদস্যপদের ভিত্তিতে | অন্তঃদল (In-group) | সদস্য একাত্মতা অনুভব করে (‘আমরা’ বোধ)। | 
| বহিঃদল (Out-group) | সদস্য একাত্মতা অনুভব করে না (‘তারা’ বোধ)। | 
৬। দলীয় গতিশীলতা ও দলীয় প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝ?
দলীয় গতিশীলতা (Group Dynamics)
দলীয় গতিশীলতা হলো একটি দলের অভ্যন্তরে সদস্যদের মধ্যেকার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া (Interaction), সম্পর্ক এবং পরিবর্তনশীল শক্তিগুলোকে অধ্যয়ন করার প্রক্রিয়া। এটি দেখায় যে কীভাবে একটি দল গঠিত হয়, কাজ করে, নেতৃত্ব সৃষ্টি করে এবং সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দলীয় গতিশীলতা মূলত দলের ভেতরের পরিবর্তনশীল শক্তি, যেমন— দলের আদর্শ, যোগাযোগ, সংহতি (Cohesion) এবং দ্বন্দ্ব নিরসনের ধরন নিয়ে আলোচনা করে। এই ‘গতিশীলতা’ বোঝায় যে দল কোনো স্থির সত্তা নয়, বরং এটি অনবরত পরিবর্তিত হচ্ছে।
দলীয় প্রক্রিয়া (Group Process)
দলীয় প্রক্রিয়া বলতে একটি দল যে ধাপে ধাপে কার্যসম্পাদন করে, সেই ধারাকে বোঝায়। এটি দলীয় গতির ব্যবহারিক দিক, যা নির্দেশ করে যে কীভাবে একটি দল লক্ষ্য অর্জন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা সমস্যার সমাধান করে।
দলীয় প্রক্রিয়ার প্রধান ধাপগুলো সাধারণত নিম্নরূপ:
১. গঠন (Forming): দল গঠন এবং সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়।
২. ঝঞ্ঝা (Storming): সদস্যদের মধ্যে মতের ভিন্নতা ও নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
3. নিয়ম স্থাপন (Norming): দলীয় আদর্শ, নিয়ম ও দায়িত্বগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪. কার্য সম্পাদন (Performing): দল সুসংগঠিতভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ শুরু করে।
৫. বিচ্ছেদ (Adjourning): দলের কাজ শেষ হয় এবং দল বিলুপ্ত হয়।
৭। সামাজিক কার্যক্রমের সংজ্ঞা দাও।
সামাজিক কার্যক্রম (Social Action) হলো সমাজকর্মের একটি মাধ্যমিক বা সহায়ক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সমাজকর্মী ও সমাজের সচেতন মানুষ সামাজিক অন্যায়, বৈষম্য বা ত্রুটিপূর্ণ আইন ও নীতির বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে লড়াই করে। এর মূল লক্ষ্য হলো সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কাঠামোগত পরিবর্তন আনা।
- ওয়েইনবার্গ (Weinberg)-এর মতে: সামাজিক কার্যক্রম হলো “সামাজিক নীতির পরিবর্তন, নতুন আইনের প্রণয়ন অথবা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে সম্মিলিত প্রয়াস।”
সংক্ষেপে, সামাজিক কার্যক্রম হলো সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পক্ষে জনমত তৈরি, দাবি আদায় এবং কাঠামোগত সংস্কারের জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও সংগঠিত আন্দোলন।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের পর্যায়গুলো উল্লেখ কর।
সামাজিক কার্যক্রম সাধারণত নিম্নলিখিত পর্যায়গুলোর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়:
১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণ: কোন সামাজিক অন্যায় বা নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা হবে, তা স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা এবং সে সম্পর্কে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা।
২. সচেতনতা সৃষ্টি: জনসাধারণ, নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমকে সমস্যাটির গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করা এবং জনমত তৈরি করা।
৩. সংগঠন ও সমাবেশ: আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করে একটি কার্যকরী সংগঠন তৈরি করা।
৪. কর্ম কৌশল নির্ধারণ: লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী ধরনের কৌশল (যেমন— লবিং, সভা-সমাবেশ, পিটিশন, আইনি ব্যবস্থা) নেওয়া হবে, তা স্থির করা।
৫. পদক্ষেপ গ্রহণ ও চাপ সৃষ্টি: নির্বাচিত কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা এবং কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
৬. পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন: গৃহীত কার্যক্রমের প্রভাব পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করা।
৮। সমষ্টি উন্নয়ন/সমষ্টি সংগঠন/সমষ্টি পরিকল্পনা কাকে বলে?
এই তিনটি ধারণা মূলত সমষ্টি সমাজকর্ম (Community Social Work)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
সমষ্টি সংগঠন (Community Organization)
সমষ্টি সংগঠন হলো সমাজকর্মের একটি মৌলিক পদ্ধতি, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকার (সমষ্টি) মানুষকে সংগঠিত করে, যাতে তারা নিজেরা তাদের সাধারণ প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর সমাধানে যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো সমষ্টির মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, নেতৃত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করা।
সমষ্টি উন্নয়ন (Community Development)
সমষ্টি উন্নয়ন হলো সমষ্টি সংগঠনের একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া। এর মূল লক্ষ্য হলো সমষ্টির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার মান সামগ্রিকভাবে উন্নত করা। এই প্রক্রিয়ায় সমষ্টির সম্পদ ও মানবশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কৃষি ইত্যাদির মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়ন আনা হয়। এটি সংগঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত ফল।
সমষ্টি পরিকল্পনা (Community Planning)
সমষ্টি পরিকল্পনা হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সম্পদ বণ্টন, কর্মসূচি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর মূল কাজ হলো সমষ্টির প্রয়োজন ও সমস্যাগুলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করা এবং সীমিত সম্পদ দিয়ে কীভাবে সর্বোচ্চ ফল লাভ করা যায়, তার নীলনকশা তৈরি করা।
৯। সামাজিক গবেষণা কী? সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ লিখ।
সামাজিক গবেষণা (Social Research)
সামাজিক গবেষণা হলো সমাজের মানুষ, তাদের আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের কাঠামোগত বিষয়াবলি সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন জ্ঞান অর্জন বা বিদ্যমান জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করার প্রক্রিয়া। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ঘটনা ও সমস্যাগুলোর কারণ অনুসন্ধান করা এবং তাদের সমাধান বা সমাজকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য তত্ত্ব নির্মাণ করা।
সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ
সামাজিক গবেষণাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। প্রধান প্রকারভেদগুলো নিম্নরূপ:
| প্রকারভেদের ভিত্তি | গবেষণার প্রকারভেদ | সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য | 
| উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে | মৌলিক গবেষণা (Basic Research) | জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, ব্যবহারিক প্রয়োগের উদ্দেশ্য থাকে না (যেমন— সামাজিক তত্ত্ব নির্মাণ)। | 
| ফলিত গবেষণা (Applied Research) | বাস্তব জীবনের কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য পরিচালিত হয় (যেমন— কোনো সরকারি প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন)। | |
| সময়ের ভিত্তিতে | দৈর্ঘ্যচ্ছেদ গবেষণা (Longitudinal Research) | একটি নির্দিষ্ট গবেষণার বিষয় দীর্ঘদিন ধরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হয়। | 
| প্রস্থচ্ছেদ গবেষণা (Cross-Sectional Research) | একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন ধরনের নমুনার ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। | |
| প্রকৃতির ভিত্তিতে | পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research) | সংখ্যা, পরিসংখ্যান ও পরিমাপের মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। | 
| গুণগত গবেষণা (Qualitative Research) | গভীরতা, ব্যাখ্যা ও অর্থ বোঝার ওপর জোর দেওয়া হয়, সংখ্যা কম ব্যবহার করা হয়। | |
| পদ্ধতির ভিত্তিতে | বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research) | কোনো সামাজিক ঘটনার প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অবস্থা বর্ণনা করে। | 
| কারণ অনুসন্ধানমূলক গবেষণা (Exploratory Research) | কোনো নতুন বা অল্প পরিচিত বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্য পরিচালিত হয়। | 
১০। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ও সমাজকর্ম পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি (Observation Method)
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হলো গবেষণার এমন একটি কৌশল, যেখানে গবেষক কোনো সামাজিক ঘটনা, ব্যক্তি বা দলের আচরণকে সরাসরি এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মনোযোগ সহকারে দেখেন ও তথ্য সংগ্রহ করেন। এটি একটি মৌলিক কৌশল, যা গবেষককে তথ্যদাতার মৌখিক তথ্যের ওপর নির্ভর না করে বাস্তব পরিবেশ থেকে সরাসরি তথ্য পেতে সাহায্য করে।
সমাজকর্ম পদ্ধতি (Methods of Social Work)
সমাজকর্ম পদ্ধতি বলতে সমাজকর্ম পেশার সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ প্রয়োগ করে সাহায্যপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধান ও সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলার জন্য ব্যবহৃত নিয়মতান্ত্রিক কৌশল ও প্রক্রিয়াকে বোঝায়। সমাজকর্ম পদ্ধতিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- ১. প্রাথমিক বা মৌলিক পদ্ধতি (Primary Methods):- ব্যক্তি সমাজকর্ম (Social Casework)
- দল সমাজকর্ম (Social Group Work)
- সমষ্টি সংগঠন (Community Organization)
 
- ২. সহায়ক বা মাধ্যমিক পদ্ধতি (Secondary Methods):- সমাজকল্যাণ প্রশাসন (Social Welfare Administration)
- সামাজিক গবেষণা (Social Research)
- সামাজিক কার্যক্রম (Social Action)
 
অথবা, পর্যবেক্ষণ কী? পর্যবেক্ষণের ধরন উল্লেখ কর।
পর্যবেক্ষণ (Observation)
পর্যবেক্ষণ হলো যেকোনো সামাজিক বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ঘটনা বা আচরণকে সরাসরি ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখা ও অনুধাবন করার প্রক্রিয়া। এটি তথ্য সংগ্রহের একটি নির্ভরযোগ্য উপায়, যেখানে গবেষক নিজে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।
পর্যবেক্ষণের ধরন (Types of Observation)
পর্যবেক্ষণের প্রধান ধরনগুলো হলো:
| পর্যবেক্ষণের ধরন | সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য | 
| অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ (Participant Observation) | গবেষক যে দল বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন, তার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং দলের সদস্য হিসেবে আচরণ করেন। | 
| অনংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ (Non-Participant Observation) | গবেষক দলের বাইরের ব্যক্তি হিসেবে দূরত্ব বজায় রেখে কেবল পর্যবেক্ষণ করেন, কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন না। | 
| নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ (Controlled Observation) | গবেষণাগার বা সুনির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ পরিবেশে পূর্বনির্ধারিত শর্ত বা নিয়ন্ত্রণের অধীনে পর্যবেক্ষণ করা হয়। | 
| অনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ (Uncontrolled Observation) | বাস্তব ও স্বাভাবিক পরিবেশে, কোনো কৃত্রিমতা বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। | 
১২। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব আলোচনা কর।
সমাজকল্যাণ প্রশাসন (Social Welfare Administration) হলো সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি ও সেবাগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার প্রক্রিয়া। এর গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি সমাজকর্মের সফল বাস্তবায়নে একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
সমাজকল্যাণ প্রশাসনের প্রধান গুরুত্বগুলো নিম্নরূপ:
১. কার্যকরী সেবা প্রদান: এটি সমাজকল্যাণ সংস্থাগুলোর কাঠামোগত বিন্যাস ও নিয়মকানুন তৈরি করে, ফলে সেবাগুলো সুসংগঠিত এবং দ্রুততার সঙ্গে সাহায্যপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
২. সম্পদের সঠিক ব্যবহার: সমাজকল্যাণ প্রশাসনের মাধ্যমে সীমিত আর্থিক, মানবিক ও ভৌত সম্পদগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এটি অপচয় রোধ করে এবং বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করে।
৩. মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা: এটি কর্মীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, সমন্বয় এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করে, যা সেবার মান বজায় রাখতে অপরিহার্য।
৪. নীতির বাস্তবায়ন: সরকার বা সংস্থার নীতি ও পরিকল্পনাগুলো বাস্তবে কার্যকর করার জন্য প্রশাসনিক কাঠামো অপরিহার্য। এটি নীতিকে কার্যক্রমে রূপ দেয়।
৫. জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা: প্রশাসন সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে জবাবদিহি (Accountability) এবং স্বচ্ছতা (Transparency) নিশ্চিত করে, যা জনসমর্থন ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
৬. সেবার মান নিয়ন্ত্রণ: এটি কর্মসূচির নিয়মিত মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সেবার মান উন্নত করতে এবং ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে সাহায্য করে।

