বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐক্যতান কবিতার মূলভাব লিখ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐক্যতান কবিতার মূলভাব লিখ। ঐক্যতান: এক অপূর্ণ…

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐক্যতান কবিতার মূলভাব লিখ।


ঐক্যতান: এক অপূর্ণ স্বপ্ন ও কবির আত্মসমালোচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐক্যতান’ কবিতাটি তাঁর পরিণত বয়সের এক গভীর আত্মসমালোচনা এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর এক মহৎ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এই কবিতায় কবি একদিকে যেমন সাহিত্যের সীমিত গণ্ডি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন, তেমনই অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবন ও শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই কবিতা যেন এক অপূর্ণ স্বপ্নের কথা বলে, যেখানে সাহিত্যের মূল সুর এখনো সমাজের বৃহত্তর অংশের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।


সাহিত্যের সীমাবদ্ধতা ও কবির আক্ষেপ

‘ঐক্যতান’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করেছেন যে তাঁর সাহিত্য সাধনা মূলত অভিজাত ও শিক্ষিত সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, এবং প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না—এগুলো তাঁর সাহিত্যে সেভাবে স্থান পায়নি, বা বলা ভালো, তিনি সেভাবে দিতে পারেননি। তিনি যেন নিজেই বলছেন, “আমার সুরের যে অংশগুলি তাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, সেগুলিকে আমি ছুঁতে পারিনি।” তিনি অনুভব করেছেন যে তাঁর লেখনী সমাজের নিচু তলার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি, যা তাঁর কাছে এক বড় অপূর্ণতা।


সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা

কবি এই কবিতায় বারবার সাধারণ মানুষের শ্রম ও জীবনযাত্রার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। যারা দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে সমাজের ভিত্তি তৈরি করে চলেছে, তাদের জীবনের গভীরতা ও সৌন্দর্যকে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এই মানুষগুলোই প্রকৃত অর্থে জীবনকে ধারণ করে আছে, অথচ তাদের গল্প সাহিত্যের পাতায় প্রায় অনুপস্থিত। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে সাহিত্য পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। তাদের জীবনকে সাহিত্যের মূল স্রোতে নিয়ে আসাই প্রকৃত ‘ঐক্যতান’ সৃষ্টি করা।


ভবিষ্যতের সাহিত্যের আহ্বান

‘ঐক্যতান’ শুধুমাত্র কবির আক্ষেপের কবিতা নয়, এটি ভবিষ্যতের সাহিত্যের প্রতি এক আহ্বানও বটে। রবীন্দ্রনাথ আশা করেছেন যে, ভবিষ্যতে এমন কবি আসবেন, যারা সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনকে তাদের সাহিত্যে তুলে ধরবেন। তিনি বলছেন, “এসো কবি, অখ্যাতজনের নির্বাক মনের/মর্মের বেদনা যত, করিয়া উদ্ধার/প্রাণহীন দেশে করো অমৃত সঞ্চার।” এই পংক্তিগুলোর মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মের সাহিত্যিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন যেন তারা সাধারণ মানুষের জীবনে প্রবেশ করেন এবং তাদের অব্যক্ত কথাগুলোকে সাহিত্যের ভাষায় প্রকাশ করেন। এইভাবেই সাহিত্য সকল মানুষের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হবে এবং এক সত্যিকারের ‘ঐক্যতান’ সৃষ্টি হবে।


উপসংহার

‘ঐক্যতান’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের বিনয়, প্রজ্ঞা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে তিনি কেবল নিজের সাহিত্যচর্চার সীমাবদ্ধতাই তুলে ধরেননি, বরং সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে এক গভীর বার্তা দিয়েছেন। এটি সাহিত্যের ইতিহাসে এক মাইলফলক, যা সাহিত্যকে শুধুমাত্র রুচিশীল মানুষের মনোরঞ্জনের উপকরণ না রেখে তাকে বৃহত্তর সমাজ জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার এক মহান আদর্শ স্থাপন করেছে।

২য় বর্ষ ডিগ্রি পরিক্ষার সকল বিষয়ের সাজেশন ও এর উত্তর

Degree suggestion Facebook group

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *