মন্বন্তরের গহুরালী নিঃস্ব হইয়াছিল বাহিরে, এবার হইল অন্তরে কিভাবে?
মন্বন্তরের গহুরালী নিঃস্ব হইয়াছিল বাহিরে, এবার হইল অন্তরে কিভাবে? শামসুদ্দীন…
মন্বন্তরের গহুরালী নিঃস্ব হইয়াছিল বাহিরে, এবার হইল অন্তরে কিভাবে?
শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পে মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে গহুরালী কীভাবে বাইরে ও ভেতরে নিঃস্ব হয়েছিলেন, তার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বাহিরে নিঃস্ব:
গহুরালী ছিলেন মাউলতলা গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক। মন্বন্তরের ভয়াবহতা তার জীবনকে চরম সংকটের মুখে ফেলে দেয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। যে প্রশান্তিময় জীবন তিনি একসময় যাপন করতেন, মন্বন্তরের উত্তাপে তা সম্পূর্ণরূপে ঝলসে যায়। তার জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যায় এবং কেবল কষ্টের ছাপই থেকে যায়। এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, কীভাবে মন্বন্তর গহুরালীর বাহ্যিক ও আর্থিক অবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকে বাইরে থেকে নিঃস্ব করে তোলে।
অন্তরে নিঃস্ব:
প্রাথমিকভাবে, গহুরালীর স্ত্রী ছিলেন তার সমব্যথী বন্ধুর মতো, যিনি তাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছিলেন। এটি ছিল তার শেষ আশ্রয় এবং সান্ত্বনার উৎস। কিন্তু পরে, গহুরালী জানতে পারেন যে তার স্ত্রী শহরের একজন দালালের সাথে পালিয়ে গেছেন। এই ঘটনাটি গহুরালীর জীবনে এক চূড়ান্ত আঘাত হানে। স্ত্রীর চলে যাওয়াতে তার শেষ সান্ত্বনার আশ্রয়টুকুও থাকে না। বাইরের অভাব-অনটনের পাশাপাশি স্ত্রীর এই বিশ্বাসঘাতকতা তাকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে দেয়। এর ফলে, গহুরালী কেবল বাইরের দারিদ্র্যেই নয়, বরং ভেতরের দিক থেকেও সম্পূর্ণভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েন, যেখানে তার কোনো মানসিক অবলম্বন বা শান্তি অবশিষ্ট ছিল না।
উপসংহারঃ মন্বন্তর গহুরালীর বাইরের সব সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল। আর স্ত্রীর চলে যাওয়া তাকে ভেতরে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব করে দেয়, যেখানে কোনো সান্ত্বনা অবশিষ্ট ছিল না।