মনসবদারি প্রথা কী?
মনসবদারি প্রথা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যা সম্রাট আকবরের শাসনামলে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রথার মাধ্যমে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কাঠামো গড়ে তোলা হয়, যা মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২য় পত্র এর উত্তর
Degree suggestion Facebook group
মনসবদারি প্রথার সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য
মনসবদারি শব্দটি পারস্য ভাষার ‘মনসব’ শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ পদ বা স্থান। এটি মুঘল আমলে সামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো, র্যাংকিং ও দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য গৃহীত একটি ব্যবস্থা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, সেনাবাহিনীর সংহতি বজায় রাখা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত করা।
প্রথার মূল বৈশিষ্ট্য
১. পদমর্যাদা ও বেতন কাঠামো: মনসবদারদের দুই ধরনের র্যাংকিং থাকত—‘জাত’ ও ‘সওয়ার’। জাত নির্দেশ করত একজন মনসবদারের সামগ্রিক মর্যাদা, আর সওয়ার নির্দেশ করত তিনি কত সংখ্যক অশ্বারোহী সৈন্যের নেতৃত্ব দেবেন।
- মনসবদার নিয়োগ ও পদোন্নতি: সম্রাট স্বয়ং মনসবদার নিয়োগ করতেন এবং তাদের কর্মক্ষমতা ও বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হতো।
- রাজস্ব ব্যবস্থা: মনসবদারদের নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভূমি থেকে রাজস্ব সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হতো, যা তাদের বেতন ও সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যবহৃত হতো।
- সামরিক ও প্রশাসনিক ভূমিকা: মনসবদাররা সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতেন এবং সাম্রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করতেন।
প্রথার বিলুপ্তি
মনসবদারি প্রথা মুঘল শাসনের শেষ দিকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৭ শতকের শেষের দিকে এবং ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার সময় এটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়।
উপসংহার
মনসবদারি প্রথা মুঘল প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, যা সাম্রাজ্যের শাসন ও সামরিক কাঠামোকে শক্তিশালী করেছিল। তবে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এটি টিকে থাকতে পারেনি। ইতিহাসে এই প্রথা প্রশাসনিক দক্ষতা ও সামরিক শৃঙ্খলার একটি উদাহরণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রেখেছে।