গোসল ফরয হওয়ার কারণগুলো লেখ
ইসলামে পবিত্রতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দৈনন্দিন জীবনের বহু ইবাদত—যেমন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, তাওয়াফ ইত্যাদি পালন করতে হলে শরীরের পবিত্রতা অপরিহার্য। এই পবিত্রতা অর্জনের জন্য দুইটি মৌলিক পদ্ধতি আছে—ওযু ও গোসল। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণে গোসল ফরয হয়ে যায়, অর্থাৎ গোসল না করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির ওপর অনেক ইবাদত হারাম হয়ে পড়ে। নিচে গোসল ফরয হওয়ার প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. যৌন মিলন বা সহবাস (জানাবাত)
স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হলে, পানি নির্গত হোক বা না হোক, উভয়ের ওপর গোসল ফরয হয়ে যায়। কেবল সংস্পর্শ হলেই জানাবাত অবস্থায় পড়ে যায় এবং তখন নামায আদায় করা যাবে না যতক্ষণ না গোসল করা হয়।
২. স্বপ্নদোষ (ইহতেলাম)
ঘুমের মধ্যে বীর্যপাত হলে তাকে স্বপ্নদোষ বলে। পুরুষ বা নারী কেউ যদি ঘুম থেকে উঠে দেখে শরীরে বীর্য লাগানো আছে, তাহলে তার ওপর গোসল ফরয।
৩. বীর্যপাত (ইজতিমাল বা কামতৃপ্তি)
ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবে, কোনোভাবে উত্তেজনার ফলে বীর্য নির্গত হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৪. ঋতুস্রাব শেষ হওয়া (হায়েযের পর)
নারীদের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময় ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়। এই সময় সালাত ও রোযা থেকে বিরত থাকতে হয়। ঋতুস্রাব শেষ হলে গোসল করা ফরয হয়ে যায়।
৫. প্রসবজনিত রক্তস্রাব শেষ হওয়া (নিফাস)
বাচ্চা জন্মের পর নারীদের যে রক্তস্রাব হয়, তা নিফাস নামে পরিচিত। এই নিফাস শেষ হওয়ার পর গোসল ফরয হয়ে যায়।
৬. ইসলাম গ্রহণ করা (কোনো অমুসলিমের ইসলাম গ্রহণ)
অমুসলিম ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তার পূর্ববর্তী অশুদ্ধতা দূর করতে গোসল ফরয হয়।
৭. মৃত ব্যক্তির গোসল (জানাজা প্রস্তুতির জন্য)
যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে, তাকে দাফনের আগে ফরযে কিফায়া হিসেবে গোসল করানো হয়। তবে শহীদ ব্যক্তি ব্যতীত সবাইকে গোসল করানো ফরয।
উপসংহার:
গোসল ফরয হওয়ার কারণগুলো শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান। এই কারণগুলো সঠিকভাবে জানা ও তা অনুসারে আমল করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য আবশ্যক। গোসল ফরয হওয়ার পর শরীর ও কাপড় সম্পূর্ণভাবে পবিত্র না করা পর্যন্ত কোনো ইবাদত কবুল হয় না। তাই পবিত্রতার গুরুত্ব বোঝা এবং তা বাস্তব জীবনে যথাযথভাবে পালন করা ইসলামের মূল শিক্ষা ও আত্মিক পরিশুদ্ধতার ভিত্তি।