বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনয়নে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। সরকার সার, বীজ, সেচ, কৃষি ঋণ, ভর্তুকি এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রচলনের মাধ্যমে কৃষিখাতকে শক্তিশালী করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে কৃষিখাত দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিডিপিতে কৃষির অবদান উল্লেখযোগ্য, এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি সৃষ্টি করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন যুগান্তকারী কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ এবং কৃষি গবেষণার প্রসারেও সহায়ক হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করব, যা এই খাতের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ:

১. কৃষি উপকরণে ভর্তুকি ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ:

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মানসম্মত কৃষি উপকরণ, যেমন – সার, বীজ, কীটনাশক এবং সেচ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে উচ্চমূল্যের কারণে কৃষকদের পক্ষে এসব উপকরণ সংগ্রহ করা কঠিন ছিল। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার বিভিন্ন কৃষি উপকরণের ওপর ব্যাপক হারে ভর্তুকি প্রদান করছে। বিশেষ করে, রাসায়নিক সারে (ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) ভর্তুকি প্রদান কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সরাসরি সহায়তা করেছে। এছাড়াও, মানসম্মত বীজ সরবরাহের জন্য সরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) এর কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমেও বীজ ও অন্যান্য উপকরণ সহজলভ্য করা হয়েছে, যা কৃষকদের কাছে উন্নত মানের উপকরণের প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও সাশ্রয়ী করেছে।

২. কৃষি ঋণ সহজীকরণ ও বিতরণ:

কৃষকদের জন্য মূলধন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফসল উৎপাদন, পশুপালন বা মৎস্য চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রায়শই কৃষকদের হাতে থাকে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি ঋণ বিতরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের স্বল্প সুদে বা বিনা জামানতে কৃষি ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যা তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে এবং দুর্গম এলাকার কৃষকদের কাছেও ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে আর্থিক সহায়তা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

৩. সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ:

বাংলাদেশের কৃষিতে সেচ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। বৃষ্টির অভাবে অনেক সময় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আধুনিক সেচ প্রযুক্তি, যেমন – ড্রিপ ইরিগেশন, স্প্রিংকলার ইরিগেশন এবং সৌরশক্তি চালিত পাম্পের ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ এবং স্লুইস গেট স্থাপনের মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা হয়েছে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের শুকনো মৌসুমেও নির্বিঘ্নে ফসল ফলাতে সাহায্য করছে।

৪. উন্নত জাতের বীজ ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিতরণ:

কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য উন্নত জাতের বীজ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ ফলনশীল (HYV) এবং রোগ প্রতিরোধক ফসলের জাত উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ধানের বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত, যেমন – ব্রি ধান ২৯, ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ৫০, এবং গমের উন্নত জাতের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি ও ফলের নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এই উন্নত জাতগুলো কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করতে প্রদর্শনী প্লট, মাঠ দিবস এবং কৃষি মেলা আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম সার ব্যবহার এবং সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতির মতো প্রযুক্তিগত জ্ঞান কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

৫. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ:

কৃষিকাজে শ্রমিকের অভাব এবং উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ একটি অপরিহার্য বিষয়। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান করছে এবং এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, রিপার, থ্রেসার এবং ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার সহ বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে সরকার ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা কম খরচে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছেন, যা একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমায়, তেমনি অন্যদিকে কৃষি কাজকে আরও দ্রুত এবং কার্যকর করে তোলে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছে।

৬. কৃষি সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ:

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের কাছে নতুন প্রযুক্তি এবং কৃষি বিষয়ক পরামর্শ পৌঁছে দিচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া, রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান ও তথ্য প্রচার করা হয়। কৃষকদের জন্য কর্মশালা, সেমিনার এবং প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের আধুনিক কৃষি চর্চা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করছে।

৭. বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ:

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলে উৎপাদনে আগ্রহ হারান। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। কৃষকদের সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কাজ করছে। বিভিন্ন কৃষি বাজার স্থাপন, কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান বা অন্যান্য ফসল ক্রয় করে থাকে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পেতে সাহায্য করছে।

৮. কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন:

কৃষিখাতের ধারাবাহিক উন্নতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন অপরিহার্য। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি গবেষণায় প্রচুর বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC) সহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন ফসলের জাত, রোগ প্রতিরোধক কৌশল এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় খরা, লবণাক্ততা এবং বন্যা সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই গবেষণাগুলি দীর্ঘমেয়াদে কৃষিখাতকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি মজবুত করছে।

৯. জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি কৃষিখাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষি পদ্ধতির প্রসারে কাজ করছে। লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত, খরা সহনশীল ফসল এবং বন্যা সহনশীল ফসল উদ্ভাবন ও বিতরণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগকালীন সময়ে কৃষকদের সহায়তা প্রদানের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু আছে। এছাড়া, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং আগাম সতর্কবার্তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের প্রস্তুত থাকতে সহায়তা করা হয়। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করছে।

১০. মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন:

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। এটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উন্নত জাতের মাছ ও পশুপাখি পালনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মৎস্য খামারিদের জন্য আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং রোগ প্রতিরোধের কৌশল সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। গবাদিপশুর টিকা প্রদান এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই কৃষির উন্ননে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এনেছে এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

১১. কৃষি বীমা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী:

কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ফসলের ক্ষতির কারণে অনেক সময় চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে কৃষি বীমা চালুর বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু এলাকায় এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি, সরকার বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে দুস্থ ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা প্রদান করে। যেমন – ভিজিএফ (VGF) কার্ড, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি যা পরোক্ষভাবে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সহায়ক।

১২. কৃষি বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন:

শুধুমাত্র ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং কৃষকদের আয় বাড়াতে কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করছে। ধান ছাড়াও শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, তেলবীজ এবং মশলার মতো উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের এসব ফসল চাষে উৎসাহিত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাজার সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের খাদ্য ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আসে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য নতুন আয়ের উৎস তৈরি করছে।

১৩. কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান:

কৃষি উৎপাদন শুধু খাদ্য সরবরাহ করে না, এটি কৃষিভিত্তিক শিল্পের কাঁচামালও সরবরাহ করে। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, হিমায়িত খাদ্য শিল্প এবং ডেইরি ফার্ম স্থাপন গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। এই শিল্পগুলি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়ায় এবং ন্যায্যমূল্য পেতে সাহায্য করে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ গ্রামীণ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখছে।

১৪. ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি সংস্কার:

কৃষি উৎপাদনের জন্য সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার ভূমি সংস্কার এবং আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল ভূমি জরিপ এবং ই-নামজারি প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, যা ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ কমাতে এবং কৃষকদের জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকদের জন্য কৃষি খাস জমি বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা তাদের জীবিকা নির্বাহে সহায়ক। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য ভূমির সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করছে।

১৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব:

বাংলাদেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন – FAO (জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা), IFAD (কৃষি উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল) এবং বিভিন্ন দেশের সাথে কৃষি গবেষণা, প্রযুক্তি বিনিময় এবং উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কৃষি প্রযুক্তি এবং জ্ঞান আহরণ করতে পারছে, যা দেশের কৃষিখাতকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করে তুলছে। এই কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ বাংলাদেশের কৃষিকে বৈশ্বিক মানচিত্রে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি সামগ্রিক ও টেকসই পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সার, বীজ, সেচ, ঋণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ধারাবাহিক বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা কৃষিখাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মতো চ্যালেঞ্জগুলি এখনও বিদ্যমান, তবে সরকারের এই দূরদর্শী কৃষির উন্নয়নে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ গুলি বাংলাদেশকে একটি খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সমৃদ্ধ অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নতুন উদ্ভাবনী কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিখাত আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তার ভূমিকা আরও সুসংহত হবে।

Degree suggestion Facebook group

২য় বর্ষ ডিগ্রি পরিক্ষার সকল বিষয়ের সাজেশন ও এর উত্তর

Leave a Comment