আমাকেই হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার- কারা, কাকে এবং কেন বারবার হত্যা করে?
আমাকেই হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার- কারা, কাকে এবং…
আমাকেই হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার- কারা, কাকে এবং কেন বারবার হত্যা করে?
আপনার প্রশ্নটি একটি কবিতার অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি শামসুর রাহমান-এর একটি কবিতার পংক্তি। পুরো পংক্তিটি হলো:
“আমাকে হত্যা করে ওরা, বায়ান্নোর রৌদ্রময় পথে,
আমাকে হত্যা করে ওরা উনসত্তরের বিদ্রোহী প্রহরে,
একাত্তরে পুনরায় হত্যা করে ওরা আমাকেই
আমাকে হত্যা করে ওরা পথের কিনারে এভন্যুর মোড়ে মিছিলে, সভায়-
আমাকে হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার।”
এখানে “আমাকে” বলতে কবি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন, যারা বারবার শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বোঝায় না, বরং বাংলাদেশী জাতিসত্তার প্রতীকী রূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কারা হত্যা করে?
“ওরা” বলতে এখানে সেই স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী, অপশক্তি বা শোষণকারীদের বোঝানো হয়েছে, যারা বারবার মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে দমন করতে চেয়েছে। এটি সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট দলের নাম নয়, বরং যারা গণতন্ত্র, মানবতা এবং ন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তাদের সম্মিলিত রূপ।
কেন বারবার হত্যা করে?
বারবার হত্যা করার কারণ হলো:
- প্রতিবাদের কণ্ঠ রোধ করা: যখনই সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়েছে, তখনই শাসকগোষ্ঠী তাদের কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা করেছে।
- স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি: ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত, প্রতিটি পর্যায়েই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা দমন করতে অপশক্তিগুলো নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
- ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা: স্বৈরাচারী শাসকরা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জনগণের যেকোনো আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে দ্বিধা করেনি।
এই কবিতার মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ বারবার রক্ত দিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। প্রতিটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের (যেমন: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ) প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ নিজেদের উৎসর্গ করেছে, আর সেই আত্মত্যাগকেই কবি “আমাকে হত্যা করে, ওরা হত্যা করে বারবার” পংক্তিটির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।