আবু মুসলিম খোরাসানির ভূমিকার উল্লেখপূর্বক আব্বাসীয় আন্দোলন সম্পর্কে
ভূমিকা
আব্বাসীয় আন্দোলন ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপ্লব। উমাইয়া খিলাফতের পতনের পেছনে এই আন্দোলনের বিশেষ অবদান ছিল। এই আন্দোলনে আবু মুসলিম খোরাসানির ভূমিকা অপরিসীম। তিনি কৌশল, নেতৃত্ব এবং সামরিক দক্ষতার মাধ্যমে আব্বাসীয় বিপ্লবকে সফল করেছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা “আবু মুসলিম খোরাসানির ভূমিকার উল্লেখপূর্বক আব্বাসীয় আন্দোলন” বিষয়ে বিশদ আলোচনা করব।
join our Degree suggestion Facebook group
আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
১. উমাইয়া শাসনের দুর্বলতা: উমাইয়া খিলাফত জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করত, বিশেষ করে পারস্য, খোরাসান ও অন্যান্য অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি। এই বৈষম্যই তাদের পতনের প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।
২. শিয়া ও আব্বাসীয় সমর্থন: আব্বাসীয়রা নিজেদের নবী মুহাম্মদের বংশধর দাবি করে জনগণের সমর্থন আদায় করেছিল। শিয়া সম্প্রদায়ও তাদের এই দাবিকে সমর্থন দিয়েছিল।
৩. খোরাসানের ভূমিকা: খোরাসান ছিল আব্বাসীয় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই সামরিক ও কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছিল।
আবু মুসলিম খোরাসানির ভূমিকা
৪. আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ: আবু মুসলিম খোরাসানি ছিলেন আব্বাসীয়দের প্রধান সামরিক নেতা। তার নেতৃত্বেই আব্বাসীয় বিপ্লব শুরু হয়।
৫. সামরিক শক্তির সম্প্রসারণ: তিনি খোরাসান ও পারস্যের অসন্তুষ্ট জনগণকে একত্রিত করে শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন।
৬. গোপন সংগঠনের প্রতিষ্ঠা: আব্বাসীয় আন্দোলনকে সফল করতে আবু মুসলিম গোপনে বেশ কিছু সংগঠন তৈরি করেন যা বিদ্রোহের সময় সক্রিয় ছিল।
৭. প্রচার কৌশল: তিনি ইসলামি ঐতিহ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে জনগণের মধ্যে আব্বাসীয়দের প্রতি আস্থা তৈরি করেন।
৮. যুদ্ধ পরিচালনা: ৭৪৭ সালে আবু মুসলিমের নেতৃত্বে উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
৯. উমাইয়াদের পতন: আব্বাসীয় বাহিনী ৭৫০ সালে উমাইয়া খলিফা মারওয়ান II-কে পরাজিত করে এবং আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
১০. প্রশাসনিক দক্ষতা: আবু মুসলিম শুধু সামরিক নেতাই ছিলেন না, বরং প্রশাসনিক দক্ষতাও প্রদর্শন করেন, যা আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
আব্বাসীয় শাসনের প্রতিষ্ঠা
১১. আব্বাসীয় খিলাফতের ঘোষণা: ৭৫০ সালে আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফ্ফাহ ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
১২. শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন: উমাইয়াদের পরিবর্তে আব্বাসীয়রা আরব-বহির্ভূত জনগোষ্ঠীকেও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।
১৩. রাজধানী স্থানান্তর: আব্বাসীয়রা রাজধানী দামেস্ক থেকে বাগদাদে স্থানান্তর করে, যা তাদের শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৪. আবু মুসলিমের পরিণতি: আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুর আবু মুসলিমের জনপ্রিয়তায় হিংসাপূর্ণ মনোভাব দেখান এবং ৭৫৫ সালে তাকে হত্যা করেন।
১৫. আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: আব্বাসীয় শাসনকাল প্রায় পাঁচ শতাব্দী স্থায়ী হয়, যা ইসলামি সভ্যতার স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার
“আবু মুসলিম খোরাসানির ভূমিকার উল্লেখপূর্বক আব্বাসীয় আন্দোলন” ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবু মুসলিমের নেতৃত্ব এবং সামরিক কৌশল উমাইয়া খিলাফতের পতন ও আব্বাসীয় রাজবংশের উত্থানে প্রধান ভূমিকা রাখে। যদিও তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারান, তার অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।