অজু ভঙ্গের কারণসমূহ লেখ
ইসলামে নামাজসহ অনেক ইবাদতের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন, যা অজুর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অজু একটি শরয়ি পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি, যা শারীরিক ও আত্মিকভাবে এক ধরনের প্রস্তুতি। তবে অজু একবার করলেই তা চিরস্থায়ী নয়। কিছু নির্দিষ্ট কাজ বা অবস্থার মাধ্যমে অজু ভেঙে যায়, তখন নতুন করে অজু করতে হয়। নিচে অজু ভঙ্গের প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো—
১. মল-মূত্র ত্যাগ
মানব শরীর থেকে পায়খানা বা প্রস্রাব বের হলে অজু ভেঙে যায়। এটি অজু ভঙ্গের অন্যতম প্রধান ও মৌলিক কারণ।
২. গ্যাস বা বায়ু নির্গমন
পায়ুপথ দিয়ে গ্যাস বা বাতাস বের হলে অজু ভেঙে যায়, যদিও তা খুব অল্প পরিমাণে হয়।
৩. রক্তপাত
যদি শরীর থেকে এত পরিমাণ রক্ত বের হয় যে তা প্রবাহিত হয় বা কাপড়ে লেগে যায়, তবে অজু ভেঙে যাবে। তবে সামান্য রক্ত বা ঘা থেকে সামান্য নিঃসরণ অজু নষ্ট করে না।
৪. বমি
অতিরিক্ত বমি হলে, বিশেষ করে যদি মুখভর্তি বমি হয় এবং তা গলার নিচ থেকে উঠে আসে, তাহলে অজু ভেঙে যায়। তবে সামান্য বমি হলে অজু ভাঙ্গে না।
৫. ঘুম
পুরোপুরি বা গভীর ঘুম অজু ভঙ্গ করে, যদি এমনভাবে ঘুমায় যে শরীর সম্পূর্ণ শিথিল হয়ে যায় (যেমন শুয়ে ঘুমানো)। তবে বসে থাকার অবস্থায় যদি ঘুম হালকা হয় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে অজু ভাঙ্গে না।
৬. পাগল বা অজ্ঞান হয়ে পড়া
যদি কেউ পাগল হয়ে যায়, সংজ্ঞা হারায় বা অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে তার অজু ভেঙে যাবে।
৭. হায়েজ বা নিফাস (মাসিক ও সন্তান জন্মের পর রক্তস্রাব)
মহিলাদের ক্ষেত্রে হায়েজ বা নিফাস শুরু হলে অজু ভেঙে যায় এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া বৈধ নয়।
৮. স্পষ্ট হাসি নামাজের সময়
নামাজের সময় উচ্চস্বরে হাসলে অজু ভেঙে যায়, যদিও এটি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে।
৯. পুরুষের লিঙ্গ স্পর্শ
নাঙ্গা হাতে নিজের বা অন্যের লিঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভেঙে যায়— হাদিস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত। তবে কাপড় পরিধান অবস্থায় ছোঁয়া দিলে অজু ভাঙ্গে না।
উপসংহার:
অজু ইসলামী ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তা পবিত্রতার প্রতীক। অজু ভেঙে গেলে ইবাদত শুদ্ধ হয় না, তাই মুসলিমদের উচিত অজু ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনমতো নতুন করে অজু করা। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ এবং ফিক্হ অনুযায়ী আমল করা মুসলিম জীবনের অপরিহার্য অংশ।